সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষ ও বিপক্ষ

,
আমি আমার যৎসামান্য বিদ্যার পুঁজি ও আধা শতাব্দীর অল্পস্বল্প অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির রাজনীতির ইতিহাস যতটুকু জানি, সন্ধ্যা সাতটায় টিভির সামনে বসলে দেখি যে তার সবই ভুল। গর্জে ওঠে টেলিভিশনের স্ক্রিন। পেছনে শোভা পায় কোনো একটি ব্যানার। রাতারাতি নামকরণ করা কোনো সংগঠনের আলোচনা সভা। মঞ্চে উপবিষ্ট অতিচেনা প্রতিমন্ত্রীরা অথবা ক্ষমতাসীন দলের দ্বিতীয়-তৃতীয় সারির কোনো নেতা। আলোচ্য বিষয়বস্তু অবধারিতভাবে একটাই: স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। সেখানে কঠোরতম ভাষায় শ্রোতাকে জ্ঞান দান করা হয়, শিক্ষা দেওয়া হয় ‘সঠিক ইতিহাস’। জাতির সমকালীন ইতিহাস হওয়া উচিত কাচের মতো স্বচ্ছ। টিভির সামনে বসলে শুধু চোখ নয়, মাথাটাও ঘোলা হয়ে যায়। দেখতে পাই বাংলার মানুষের ইতিহাস ধুলায় ধূসরিত।
১০ এপ্রিল মুজিবনগরের ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে’ যে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, তা ছিল রাষ্ট্রপতিপদ্ধতির সরকার। অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে করা হয়েছিল রাষ্ট্রপতি। তাঁর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে করা হয় উপরাষ্ট্রপতি বা অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি। পাকিস্তানি কারাগারে থাকায় ওই ঘোষণাপত্র সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু কিছু জানতেন না। মুক্তিযুদ্ধের সময় বিস্তারিত আলোচনা করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ ছিল না। কিন্তু বঙ্গবন্ধু যখন ফিরে এলেন, এর পরদিন সরকারপদ্ধতির পরিবর্তন ঘটিয়ে মোটামুটি ব্রিটিশ ওয়েস্টমিনিস্টার পদ্ধতির সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকারপদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। এর জন্য ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি একটি আদেশ জারি করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারির সেই অর্ডার বা অধ্যাদেশের মূল্য সীমাহীন। সেটি ছিল আমাদের রাষ্ট্রের সাময়িক সময়ের জন্য ‘সংবিধান’, যার নাম ছিল ‘দ্য প্রভিশনাল কনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ অর্ডার, ১৯৭২’। এক রাতের মধ্যে ওটি রচনার দায়িত্ব যাঁরা পালন করেছিলেন তাঁদের একজন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ছাড়া এখনো জীবিত আছেন ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। সেই সাময়িক সাংবিধানটি ছিল অতি সংক্ষিপ্ত, এক পৃষ্ঠার মতো; কিন্তু এর বিষয়বস্তু ছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই তা রচিত হয়েছিল। কারণ, তখন তাঁর হুকুম ছাড়া গাছের পাতাটিও মাটিতে পড়ত না। আইন বিশেষজ্ঞদের তিনি যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁরা সেভাবেই দলিল তৈরি করেছেন আইনের পরিভাষায়।
১১ মাস পরে ডিসেম্বরে যে সংবিধান গৃহীত হলো, তার ভিত্তি ছিল ১১ জানুয়ারির রাষ্ট্রপতির সেই আদেশ। সেই আদেশের বিষয়বস্তুরও একটি পটভূমি আছে। সেই আদেশে ধারণ করা হয়েছিল ১৯৫৪ সালের নির্বাচনী অঙ্গীকার ২১ দফা, ১৯৬৬-র ছয় দফা এবং ’৬৯-এর ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফার চেতনা। অর্থাৎ, বাংলাদেশের জনগণের দাবি সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকার। সেই দাবির প্রতি সম্মান দেখাতেই বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপ্রধানের সর্বোচ্চ পদ থেকে সরকারপ্রধানের আসনে নেমে আসতে দ্বিধা করেননি।
রাষ্ট্রপতির ওই আদেশের ভিত্তিতে সরকার পুনর্গঠন করা হয়। প্রবাসে গঠিত সরকার বিলুপ্ত হয়। নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম বঙ্গবন্ধুকে ১২ জানুয়ারি সকালে বঙ্গভবনে শপথ পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। তিনি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি হিসেবে। নতুন মন্ত্রিসভাও সেদিন গঠিত হয়। ১০-১১ জনের ছোট মন্ত্রিসভা। তাতে ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, খন্দকার মোশতাক, মনসুর আলী, এ এইচ এম কামরুজ্জামান, আবদুস সামাদ আজাদ, শেখ আজিজ, ইউসুফ আলী, জহুর আহমদ চৌধুরী, ফণিভূষণ মজুমদার ও কামাল হোসেন। পার্লামেন্ট না থাকলেও পার্লামেন্টারি সরকার নতুন রাষ্ট্রে যাত্রা শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার বিরল সৌভাগ্য হয়েছিল যাঁদের, আমি তাঁদের একজন। সে এক রোমাঞ্চকর মুহূর্ত। এখন আলোচনা সভায় গোলটেবিলে যাঁরা টেবিল চাপড়ান, তাঁদের সেদিনের অনুভূতি বোঝাতে পারব না।
পুরোনো দিনের সেসব নিষ্প্রয়োজনীয় কথা বলার আবশ্যকতা এখানে যে, আমি বলতে চাইছি বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল সংসদীয় গণতন্ত্র দিয়ে। ১৯৭৩ সালের মার্চে প্রথম নির্বাচনের মাধ্যমে তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য জাতির যে, দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ১৯৭৫ সালে সংসদীয় গণতন্ত্রের কবর রচিত হয়। প্রবর্তিত হয় একদলীয় ও রাষ্ট্রপতিপদ্ধতির একনায়কি শাসন। সেটাও মওলানা ভাসানীর ভাষায়, ‘মন্দের ভালো ছিল, বন্দুকঅলাদের চেয়ে ভালো’। কিন্তু তা বেশি দিন টিকল না। রক্তপাত ঘটল অকল্পনীয় নারকীয়ভাবে। আওয়ামী লীগের একশ্রেণীর নেতাই ক্ষমতা ভাগবাটোয়ারা করে সরকার চালালেন পৌনে তিন মাস। তারপর এল সরাসরি সামরিক শাসন। জাতির জীবন থেকে হারিয়ে গেল ভাষা আন্দোলনের চেতনা, ৫৪-র ২১ দফার চেতনা, ৬২-র শিক্ষা আন্দোলনের মর্মবাণী, ৬৬-র ছয় দফার চেতনা, ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছাত্রদের ১১ দফার অঙ্গীকার এবং সবচেয়ে যা বেদনাদায়ক তা হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে করতে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, সেই গণতন্ত্রই দেশ থেকে নির্বাসিত হলো। রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী নেতা, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা, বুদ্ধিজীবীরা চেয়ে চেয়ে দেখলেন। অনেকে সুবিধাবাদিতার কাছে আত্মসমর্পণ করলেন। কিন্তু ছাত্র-যুবসমাজ অবস্থাটাকে মেনে নেয়নি। তারা রক্তের বিনিময়ে ৯০-তে স্বৈরাচারের পতন ঘটায়। সেই আন্দোলনে আট বছরব্যাপী নেতৃত্ব দেন যুগপৎ শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়া।
পাঁচ দফা দাবিতে তাঁরা ১৯৮৩ সালে আন্দোলন শুরু করেন। তাতে বলা হয়েছিল, ‘অবিলম্বে সামরিক আইনের শাসন প্রত্যাহার করতে হবে’ এবং ‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের তত্ত্বাধানে...সার্বভৌম জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে এবং সংবিধানসংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কেবলমাত্র জনগণের নির্বাচিত সার্বভৌম জাতীয় সংসদেরই থাকবে—অন্য কারো নয়।’
৪ ডিসেম্বর ১৯৯০ জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ৫ ডিসেম্বর ভোরে শেখ হাসিনা দেশবাসীকে ‘সালাম’ ও ‘বিপ্লবী অভিনন্দন’ জানিয়ে বলেন, তিন জোটের ‘ঘোষিত রূপরেখা অনুযায়ী একটি অন্তর্বর্তীকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার’ নির্বাচন করে জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। একই সময় খালেদা জিয়া জনগণকে ‘সংগ্রামী অভিনন্দন’ জানিয়ে বলেন, ‘আন্দোলনের মূল লক্ষ্য গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য একটি সুখী সমাজ গড়ে তোলার কাজ আমাদের শুরু করতে হবে।’
সেদিন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দায়িত্বভার জনগণ অর্পণ করেছিল দুই নেত্রীর ওপর। নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন করে সংসদ গঠন করে। তখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতিপদ্ধতির সরকার ছিল। ওই পদ্ধতি বেগম জিয়ার পছন্দ ছিল। তাঁর স্বামী ছিলেন রাষ্ট্রপতি। শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও গণতান্ত্রিক নেতার মেয়ে। তিনি তখন একটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় অবস্থান গ্রহণ করেন। তিনি চাইলেন, সংবিধান সংশোধন করে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রবর্তিত হোক। ৪০ বছর যাবৎ জনগণের দাবিও তা-ই। অনিচ্ছা সত্ত্বেও শেখ হাসিনার দাবির প্রতি বেগম জিয়া সমর্থন দেন।
১৯৯১ সাল থেকে পুনঃপ্রবর্তিত হয় সংসদীয় গণতন্ত্র। পঞ্চম সংসদের সূচনায় যেদিন মধ্যরাতে দুই নেত্রী দেশকে সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরিয়ে আনেন, সেই দৃশ্যকে আমার কাছে মনে হয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য। সেদিন শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে সবচেয়ে সুন্দর লেগেছিল। তাঁদের হাসির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে হেসেছিল বাংলার প্রতিটি গণতন্ত্রকামী মানুষ।
কিন্তু মানুষের সুখের সেই হাসি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। অল্প সময়ের মধ্যেই তা মুছে যায়। গণতন্ত্রকামী মানুষের মুখে নেমে আসে বিষাদের ছায়া। সংবিধান হলো একটি মুদ্রিত বই। আর গণতন্ত্র হলো একটি মূল্যবোধ; একটি অমূল্য চেতনা। গণতন্ত্র হলো জনগণের সঙ্গে শাসকদের চুক্তি: সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মতামতকে আমরা মূল্য দেব এবং সংখ্যায় যারা কম—এমনকি একজন হলেও—তাদের কথা শুনব এবং একজনের কথাও যদি যুক্তিযুক্ত হয় তা সংখ্যাগরিষ্ঠরা বিবেচনা করে দেখবে। কিন্তু ৯১ সালে যে সরকার গঠিত হলো, সেই সরকারের নেতারা জানতেন না সংসদীয় গণতন্ত্র জিনিসটা কী! বিরোধী দলে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা বাঙালি জাতীয়তাবাদী। সংগীত-নাটক তাঁদের পছন্দ। তাঁরা রাজপথে নাটক মঞ্চস্থ করতে লাগলেন। সরকারি দল ও বিরোধী দলের সমন্বয়েই সংসদীয় গণতন্ত্র। আমাদের দুই পক্ষ দুই দিকে হাঁটা দিল। মধ্যরাতে এক হয়েছিল, দিনের আলো ফুটতে না ফুটতে কেউ কারও মুখ দেখবে না বলে কঠিন শপথ নিল।
নব্বইয়ের দশকের মধ্যভাগে বিএনপি ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার মনস্থ করে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠনের স্বপ্ন দেখে। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্িট ও জামায়াতে ইসলামী বুঝতে পারে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে সরকারি দলকে পরাজিত করা সম্ভব নয়। জামায়াত আওয়ামী লীগের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য উত্তাল আন্দোলন ও জ্বালাও পোড়াও শুরু করে। একটি ক্ষণজীবী সংসদকে দিয়ে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করিয়ে নেয়। সংবিধানে সংসদীয় গণতন্ত্রই রইল, কিন্তু তার সঙ্গে যোগ হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা। ওই ব্যবস্থা প্রবর্তনে শেখ হাসিনার ভূমিকাই প্রধান। এবং জনগণ তা মেনে নিল।
যা হোক, এক পা-বিশিষ্ট সংসদীয় গণতন্ত্র অর্থাৎ সরকারদলীয় সংসদীয় গণতন্ত্র চালু রইল ২০০৬ সাল পর্যন্ত। ২০০৭ সালের পৌষের এক সন্ধ্যায় জাতির জীবনে দেখা দিল এক গায়েবি সরকার। সেই উদ্দীনীয় সরকারের রোডম্যাপ যে কয়খানা ছিল, তা তারা ও তাদের গঠনকারীরা জানেন। তাঁরা পরদিন সকালেই ঘোষণা করলেন, জাতির রেলগাড়িটি লাইনের পাশে কাত হয়ে পড়ে গিয়েছিল। তাঁরা টেনেটুনে লাইনের ওপরে তুলে বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে আবার ইঞ্জিনে স্টার্ট দিয়েছেন। জাতি এবার উত্তাল গতিতে ছুটবে। বন্দুকের ব্যবহার তাঁরা করলেন না। হাতে নিলেন হাতুড়ি। ভাঙতে লাগলেন অবৈধ স্থাপনা। বহু মানুষের বাড়িঘরের অবৈধ অংশ চূর্ণ করা হলো। কিন্তু যখনই বড় কর্তার কোনো আত্মীয়ের বাড়িটিতে দেখা গেল অবৈধ বাড়তি অংশ, অমনি হুকুম হলো হাতুড়ি-শাবলের কাজ বন্ধ রাখো।
ভাঙাভাঙি দিয়ে কিছু হবে না। জাতিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান শিক্ষা দিতে হবে। সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে নয়, মস্ত বড় হোটেলের জলসাঘরে। হ্যারল্ড লাস্কির রাজনৈতিক ব্যাকরণে যা নেই, আমাদের জেনারেল ও অধ্যাপক জুটি সে দর্শন দিলেন। আমাদের বড় বড় পণ্ডিত ও রাজনীতিক গালে হাত দিয়ে বসে জলসাঘরের রাজনৈতিক দর্শন শুনে হাততালি দিয়ে বললেন, চমৎকার।
কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউয়ের হোটেলের জলসাঘর থেকে রাজনৈতিক দর্শন প্রচার করতে কর্তা ছুটে গেলেন আমেরিকার এক নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে তিনি যে বক্তৃতা দিলেন, তাকে আমাদের বিদ্বানেরা স্বামী বিবেকানন্দের শিকাগো বক্তৃতার সঙ্গে তুলনা করলেন। সেখানে বক্তৃতার ফাঁকে কথাও হলো কারও কারও সঙ্গে—নতুন রোডম্যাপ নিয়ে।
শুধু বক্তৃতায় হবে না। বাঙালি মুসলমান শাসকেরা বখতিয়ার খিলজির উত্তরাধিকারী। তাঁদের মার্সিডিজ বা বিএমডব্লিউ থাকলেই হবে না—ঘোড়া দরকার। তিনি ঘোড়া আনতে ছুটলেন আরেক দেশে। সেখানে আধা ডজন ঘোড়া আর রাষ্ট্রপতির সম্মান পেলেন। সেখানে কী কথা হয়েছিল, তা ঘোড়াগুলো বাংলা অথবা হিন্দিতে কথা বলতে পারলে শোনা যেত।
যা হোক, বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে কোনো গোত্রই কম করেনি। শুধু সেনাপতিদের দোষ দিলে হবে না। আয়নায় চেহারা দেখতে অনুরোধ করি রাজনীতিক, শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক, কলাম লেখক, ব্যবসায়ী, আমলা, ধর্মব্যবসায়ী, ছাত্র-যুবনেতা, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার নেতা, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার প্রভৃতি পেশার সুযোগসন্ধানীদের।
আমরা মনে করেছিলাম, সংসদীয় গণতন্ত্রের পুনর্যাত্রা শুরু হলো ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে। নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা আর সংসদীয় গণতন্ত্র এক জিনিস নয়। কমিউনিস্টরাই প্রতিষ্ঠা করতে পারেন সমাজতন্ত্র, মেকি কমিউনিস্টরা নন। খাঁটি গণতন্ত্রীদের পক্ষেই সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব, ভণ্ড গণতন্ত্রী বা গণতন্ত্রের ধ্বজাধারীদের পক্ষে নয়। আমাদের জনগণ সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে অবিচল, ভণ্ডরা তাদের ধোঁকা দিয়ে একটা ভেজালব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেছে। গত তিন বছরে দেশে যা ঘটেছে, এর জন্য গণতন্ত্রের বিপক্ষ শক্তি দায়ী।
সংবিধানের নতুন সংস্করণ হোক, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হোক, ঢাকা দুই টুকরো করা হোক, বিভিন্ন বৈদেশিক চুক্তি হোক—সবকিছুর দায় কোনো একজন ব্যক্তির ওপর বর্তালে চলবে না। ৩৪৪ জনকেও জবাবদিহি করতে হবে। নির্বাচিত হয়ে লালবাড়িতে প্রবেশের পর থেকে জনগণের জন্য কী কাজটা তাঁরা করেছেন? ব্যর্থ রাষ্ট্রের ডেফিনিশন পেন্টাগন-পোষিত পণ্ডিতেরা জানেন, আমরা জানি রাষ্ট্রের ব্যর্থতা কাকে বলে। সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কখনো ব্যর্থ হয় না। একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠন শুধু উদার গণতান্ত্রিক নেতাদের পক্ষেই সম্ভব।

Partner site : online news / celebrities /  celebrity image
website design by Web School.

0 comments to “সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষ ও বিপক্ষ”

Post a Comment