Tue, 19/07/2011 - 6:14pm | by Shykh.Seraj
আমাদের অনেক হতাশা আছে, আছে না পাওয়ার অনেক ইতিবৃত্ত। সব
শ্রেণী-পেশার মানুষই গড়পড়তা ‘নেই নেই কিছু নেই’ রব তুলতে দ্বিধা করে না।
কিন্তু এই না পাওয়া ও না থাকার ভেতরেই আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি,
পৃথিবীতে আমরাই সেই জাতি, যারা স্বাধীনতার ৪০ বছরে খাদ্যশস্যের উ ৎ পাদন
তিন গুণ বৃদ্ধি করতে সমর্থ হয়েছি। স্বাধীনতার সময় আমাদের জনসংখ্যা ছিল সাত
কোটি; এখন তা দ্বিগুণেরও বেশি। কিন্তু এর মধ্যেও আমাদের অর্জন অনেক বেশি।
আমরা নিজেদের উ ৎ পাদন দিয়েই পুরো জনগোষ্ঠীর খাদ্যচাহিদার প্রায় সবটুকু
মেটাতে পারছি। কিছু না হোক, প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি মানুষ ভাত খেয়ে বেঁচে
থাকছি। এর চেয়ে গর্বের কিছু নেই। একাত্তরে আমাদের চালের উ ৎ পাদন ছিল
মাত্র এক কোটি টন, এখন তিন কোটি টনের ওপরে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে,
চালের উ ৎ পাদন কমবেশি তিন কোটি ১৪ লাখ মেট্রিক টন। কথা হচ্ছে, আমাদের
মতো জনবহুল ও অল্প জমির দেশে প্রধান খাদ্যশস্য ধান-চাল আবাদের এই
প্রাচুর্য এমনি এমনি সৃষ্টি হয়নি। এর পেছনে রয়েছে বিজ্ঞানের হাত; মানে
বিজ্ঞানীদের নিবিড় মনোযোগ ও গবেষণা-সাফল্য। একই জমিতে বেশি ধান উ ৎ পাদনে
বিজ্ঞানীদের নিরন্তর ও সফল গবেষণা। আর এ ক্ষেত্রে যত বিজ্ঞানীর অবদান,
ত্যাগ, নিষ্ঠা ও অক্লান্ত শ্রম রয়েছে, তার মধ্যে ড. শাহ্ মো.
হাসানুজ্জামানের নাম অগ্রগণ্য।
ষাটের দশকে যখন বিশ্বব্যাপী মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা নড়েচড়ে বসছেন, তখন আমাদের আজকের এই বাংলাদেশও ছিল সংকটাপন্ন দেশের সারিতে। তখন যে কয়জন তরুণ বিজ্ঞানী দেশের মানুষের খাদ্যের নিশ্চয়তা দেওয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন, তাঁদের অন্যতম ড. শাহ্ মো. হাসানুজ্জামান। অনেকেরই জানা নেই, কী বিশাল অবদান তাঁর এ দেশের ধান গবেষণায়! তিনি ১৯৬৯ সাল থেকে রাইস স্পেশালিস্টে ইকোনমিক বোটানিক হিসেবে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার সময় তিনি নিযুক্ত হন সহকারী পরিচালক হিসেবে। ১৯৭৮ সালে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের প্রথম মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন। ১৯৮৪ সালে অবসর গ্রহণ পর্যন্ত তিনি ওই দায়িত্বেই বহাল থেকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটকে নিয়ে গেছেন কৃতিত্বপূর্ণ অবস্থানে। বাংলাদেশের প্রথম রাইস ব্রিডার হিসেবে ধান গবেষণায় তাঁর নেতৃত্বেই আসে যুগান্তকারী সাফল্য। এ দেশের মানুষ স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত উচ্চফলনশীল জাতের যে ধানগুলোর আবাদ শুরু করে, তার সবই হাসানুজ্জামানের উদ্ভাবিত। তাঁর সময়ে তাঁর নিজের হাতে ও প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে উদ্ভাবিত হয়েছে এ দেশের উচ্চফলনশীল প্রায় ২৪টি জাত। সেই জাতগুলোই আমাদের ধানের ফলন বৃদ্ধির প্রধান বুনিয়াদ। সেই ধানগুলোই আজও জনপ্রিয় দেশের মানুষের কাছে, সম্প্রসারকদের কাছে; বিজ্ঞানীদের কাছে তো বটেই। তারপর যত জাতের গবেষণা হয়েছে, সব তারই ধারাবাহিকতা। বলা যায়, অধ্যাপক হাসানুজ্জামান আমাদের ধান গবেষণার প্রধান নায়ক। প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি মানুষের ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার এক নিয়ামক শক্তি। তাঁর পথ ধরে এ দেশে অনেক বিজ্ঞানী তৈরি হয়েছেন, দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন শত শত বিজ্ঞানী।
৮৬ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত নানা রোগ নিয়ে তিনি আজ শয্যাশায়ী। তাঁর এক শুভাকাঙ্ক্ষী মারফত খবর পেলাম, হাসপাতালে চিকি ৎ সা করার মতো আর্থিক সংগতিও তাঁর পরিবারের নেই। সারা জীবন দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া মানুষটির পাশেও নেই তেমন কেউ। বন্ধুস্থানীয় বর্ষীয়ান বিজ্ঞানীরা তাঁর এই শেষ বয়সের অপ্রত্যাশিত পরিণতি দেখে মর্মাহত। খোঁজখবর জানার জন্য সেদিন কথা বলেছিলাম ড. কাজী বদরুদ্দোজার সঙ্গে। হাসানুজ্জামানের সমসাময়িক কৃষিবিজ্ঞানী হিসেবে তিনি বলেন, দেশের জন্য নিরন্তর কাজ করে যাওয়া বিজ্ঞানীদের শেষ জীবনের এই অসহায়ত্ব খুবই অপ্রত্যাশিত। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র কোনোভাবেই তার দায় এড়িয়ে যেতে পারে না।
ষাটের দশকে যখন বিশ্বব্যাপী মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা নড়েচড়ে বসছেন, তখন আমাদের আজকের এই বাংলাদেশও ছিল সংকটাপন্ন দেশের সারিতে। তখন যে কয়জন তরুণ বিজ্ঞানী দেশের মানুষের খাদ্যের নিশ্চয়তা দেওয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন, তাঁদের অন্যতম ড. শাহ্ মো. হাসানুজ্জামান। অনেকেরই জানা নেই, কী বিশাল অবদান তাঁর এ দেশের ধান গবেষণায়! তিনি ১৯৬৯ সাল থেকে রাইস স্পেশালিস্টে ইকোনমিক বোটানিক হিসেবে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার সময় তিনি নিযুক্ত হন সহকারী পরিচালক হিসেবে। ১৯৭৮ সালে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের প্রথম মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন। ১৯৮৪ সালে অবসর গ্রহণ পর্যন্ত তিনি ওই দায়িত্বেই বহাল থেকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটকে নিয়ে গেছেন কৃতিত্বপূর্ণ অবস্থানে। বাংলাদেশের প্রথম রাইস ব্রিডার হিসেবে ধান গবেষণায় তাঁর নেতৃত্বেই আসে যুগান্তকারী সাফল্য। এ দেশের মানুষ স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত উচ্চফলনশীল জাতের যে ধানগুলোর আবাদ শুরু করে, তার সবই হাসানুজ্জামানের উদ্ভাবিত। তাঁর সময়ে তাঁর নিজের হাতে ও প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে উদ্ভাবিত হয়েছে এ দেশের উচ্চফলনশীল প্রায় ২৪টি জাত। সেই জাতগুলোই আমাদের ধানের ফলন বৃদ্ধির প্রধান বুনিয়াদ। সেই ধানগুলোই আজও জনপ্রিয় দেশের মানুষের কাছে, সম্প্রসারকদের কাছে; বিজ্ঞানীদের কাছে তো বটেই। তারপর যত জাতের গবেষণা হয়েছে, সব তারই ধারাবাহিকতা। বলা যায়, অধ্যাপক হাসানুজ্জামান আমাদের ধান গবেষণার প্রধান নায়ক। প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি মানুষের ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার এক নিয়ামক শক্তি। তাঁর পথ ধরে এ দেশে অনেক বিজ্ঞানী তৈরি হয়েছেন, দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন শত শত বিজ্ঞানী।
৮৬ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত নানা রোগ নিয়ে তিনি আজ শয্যাশায়ী। তাঁর এক শুভাকাঙ্ক্ষী মারফত খবর পেলাম, হাসপাতালে চিকি ৎ সা করার মতো আর্থিক সংগতিও তাঁর পরিবারের নেই। সারা জীবন দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া মানুষটির পাশেও নেই তেমন কেউ। বন্ধুস্থানীয় বর্ষীয়ান বিজ্ঞানীরা তাঁর এই শেষ বয়সের অপ্রত্যাশিত পরিণতি দেখে মর্মাহত। খোঁজখবর জানার জন্য সেদিন কথা বলেছিলাম ড. কাজী বদরুদ্দোজার সঙ্গে। হাসানুজ্জামানের সমসাময়িক কৃষিবিজ্ঞানী হিসেবে তিনি বলেন, দেশের জন্য নিরন্তর কাজ করে যাওয়া বিজ্ঞানীদের শেষ জীবনের এই অসহায়ত্ব খুবই অপ্রত্যাশিত। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র কোনোভাবেই তার দায় এড়িয়ে যেতে পারে না।