Sat, 05/11/2011 - 6:40pm | by ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন
কোরবানি আরবি শব্দ, আরবিতে কোরবানুন কুরবুন শব্দ থেকে নির্গত যার অর্থ নৈকট্য, উৎসর্গ, বিসর্জন ও ত্যাগ প্রভৃতি। কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং ইসলামের একটি অন্যতম ঐতিহ্য। শরিয়তের পরিভাষায়, আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে জিলহজ মাসের ১০, ১১, ১২ এ তিনটি দিনে আল্লাহর নামে নির্দিষ্ট নিয়মে হালাল পশু জবেহ করাই হলো কোরবানি। ত্যাগ, তিতিক্ষা ও প্রিয়বস্তু আল্লাহর সন'ষ্টির জন্য উৎসর্গ করাই কোরবানির তাৎপর্য। প্রচলিত কোরবানি হজরত ইব্রাহিম আ:-এর অপূর্ব আত্মত্যাগের ঘটনারই স্মৃতিবহ। হাদিসে বর্ণিত আছে : ‘রাসূলুল্লাহ সা:-এর সাহাবিগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ কোরবানি কী? তিনি বললেন, এটি তোমাদের পিতা ইব্রাহিম আ:-এর সুন্নত। তাঁরা বললেন, এতে আমাদের কী কল্যাণ নিহিত আছে? তিনি বললেন, এর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি রয়েছে। তাঁরা ফের জিজ্ঞাসা করলেন, বকরির পশমেও কি তাই? জবাবে তিনি বললেন, বকরির প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকি আছে।’ মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম আ: থেকে অব্যাহতভাবে চলে আসছে কোরবানির ঐতিহ্য ধারা।
আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে হজরত ইব্রাহিম আ: স্বপ্নাদিষ্ট হয়েছিলেন প্রিয়তম বস্তু তথা তার সন্তান ইসমাইলকে কোরবানি করার জন্য। সেই অনুযায়ী তিনি পরম করুণাময় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রিয় সন্তানকে কোরবানি দিতে উদ্যত হন। কিন্তু মহান আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁকে আর শেষ পর্যন্ত সন্তানকে কোরবানি দিতে হয়নি। ইসমাইলের পরিবর্তে কোরবানি হয় একটি পশু। মহান আল্লাহর এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন হজরত ইব্রাহিম আ:। এই সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমাকে তুলে ধরাই ঈদুল আজহার পশু কোরবানির প্রধান মর্মবাণী। কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের পাশাপাশি মানবিক গুণাবলির বিকাশ সাধন, চিন্তার স্বচ্ছতা, ত্যাগের মহিমা, হৃদয়ের উদারতা সব কিছু মিলে কোরবানির এক স্মরণীয় অধ্যায়।
সুস্থ মস্তিষ্ক, প্রাপ্তবয়স্ক, মুকিম (মুসাফির নয় এমন ব্যক্তি) ব্যক্তিই ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সন্ধ্যা পর্যন্ত নিসাব (সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা অথবা সেই পরিমাণ নগদ অর্থ) পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, তবে তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য জাকাতের নিসাবের মতো সম্পদের এক বছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয়। বরং যে অবস্থায় সাদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হয় ওই অবস্থায় কোরবানিও ওয়াজিব হবে।
নেক আমলগুলোর মধ্যে কোরবানি একটি বিশেষ আমল। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সা: সব সময় কোরবানি করেছেন এবং সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি বর্জনকারী ব্যক্তির প্রতি তিনি সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। মহানবী সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি-সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’
কোরবানির এ ফজিলত হাসিল করতে হলে প্রয়োজন ওই আবেগ, অনুভূতি, প্রেম-ভালোবাসা ও ঐকান্তিকতা যা নিয়ে কোরবানি করেছিলেন আল্লাহর খলিল হজরত ইব্রাহিম আ:। কেবল গোশত ও রক্তের নাম কোরবানি নয়, বরং আল্লাহর রাহে নিজের সম্পদের একটি অংশ বিলিয়ে দেয়ার এক দৃপ্ত শপথের নাম কোরবানি। গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করলে তা আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। কেননা আল্লাহ তায়ালার কাছে গোশত ও রক্তের কোনো মূল্য নেই। মূল্য আছে কেবল তাকওয়া, পরহেজগারি ও ইখলাসের। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, আল্লাহর কাছে কখনো জবাইকৃত পশুর গোশত ও রক্ত পৌঁছবে না, পৌঁছবে কেবল তাকওয়া (সূরা হজ : ৩)।
অতএব, আমাদের একান্ত কর্তব্য, খাঁটি নিয়তসহকারে কোরবানি করা এবং তা থেকে শিক্ষার্জন করা। নিজেদের আনন্দে অন্যদের শরিক করা ঈদুল আজহার শিক্ষা। কোরবানিকৃত পশুর গোশত তিন অংশে ভাগ করে এক অংশ নিজের জন্য সংরক্ষণ, দ্বিতীয় অংশ আত্মীয়স্বজনকে প্রদান এবং তৃতীয় অংশ সমাজের অভাবগ্রস্ত ও দরিদ্রদের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া ইসলামের বিধান। কোরবানিকৃত পশুর চামড়া অনাথ আশ্রম, এতিমখানা ও মাদরাসার দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ভরণপোষণের জন্য প্রদান করলে সওয়াব হাসিল হয়। এক- দুঃখী মানুষের সাহায্য; দ্বিতীয়- দ্বীনি শিক্ষার বিকাশ। প্রকৃতপক্ষে কোরবানিদাতা কেবল পশুর গলায় ছুরি চালায় না বরং সে তো ছুরি চালায় সব প্রবৃত্তির গলায় আল্লাহর প্রেমে পাগলপারা হয়ে। এটিই কোরবানির মূল নিয়ামক ও প্রাণশক্তি। এ অনুভূতি ব্যতিরেকে যে কোরবানি করা হয় তা হজরত ইব্রাহিম ও ইসমাইল আ:-এর সুন্নত নয়, এটি এক রসম তথা প্রথা মাত্র। এতে গোশতের ছড়াছড়ি হয় বটে, কিন্তু ওই তাকওয়া হাসিল হয় না যা কোরবানির প্রাণশক্তি। পশু কোরবানির মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে মানুষের মধ্যে বিরাজমান পশুশক্তি, কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, পরনিন্দা, পরশ্রীকাতরতা প্রভৃতি রিপুগুলোকেই কোরবানি দিতে হয়। আর হালাল অর্থে অর্জিত পশু কোরবানির মাধ্যমে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটানো হয়। আমরা চাই ব্যক্তি, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সব অনিশ্চয়তা-শঙ্কা দূর হোক। হিংসা, হানাহানি ও বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে কোরবানির আনন্দে শামিল হয়ে সবার মধ্যে সাম্য ও সহমর্মিতার মনোভাব জাগিয়ে তুলতে হবে।
কোরবানি আরবি শব্দ, আরবিতে কোরবানুন কুরবুন শব্দ থেকে নির্গত যার অর্থ নৈকট্য, উৎসর্গ, বিসর্জন ও ত্যাগ প্রভৃতি। কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং ইসলামের একটি অন্যতম ঐতিহ্য। শরিয়তের পরিভাষায়, আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে জিলহজ মাসের ১০, ১১, ১২ এ তিনটি দিনে আল্লাহর নামে নির্দিষ্ট নিয়মে হালাল পশু জবেহ করাই হলো কোরবানি। ত্যাগ, তিতিক্ষা ও প্রিয়বস্তু আল্লাহর সন'ষ্টির জন্য উৎসর্গ করাই কোরবানির তাৎপর্য। প্রচলিত কোরবানি হজরত ইব্রাহিম আ:-এর অপূর্ব আত্মত্যাগের ঘটনারই স্মৃতিবহ। হাদিসে বর্ণিত আছে : ‘রাসূলুল্লাহ সা:-এর সাহাবিগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ কোরবানি কী? তিনি বললেন, এটি তোমাদের পিতা ইব্রাহিম আ:-এর সুন্নত। তাঁরা বললেন, এতে আমাদের কী কল্যাণ নিহিত আছে? তিনি বললেন, এর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি রয়েছে। তাঁরা ফের জিজ্ঞাসা করলেন, বকরির পশমেও কি তাই? জবাবে তিনি বললেন, বকরির প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকি আছে।’ মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম আ: থেকে অব্যাহতভাবে চলে আসছে কোরবানির ঐতিহ্য ধারা।
আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে হজরত ইব্রাহিম আ: স্বপ্নাদিষ্ট হয়েছিলেন প্রিয়তম বস্তু তথা তার সন্তান ইসমাইলকে কোরবানি করার জন্য। সেই অনুযায়ী তিনি পরম করুণাময় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রিয় সন্তানকে কোরবানি দিতে উদ্যত হন। কিন্তু মহান আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁকে আর শেষ পর্যন্ত সন্তানকে কোরবানি দিতে হয়নি। ইসমাইলের পরিবর্তে কোরবানি হয় একটি পশু। মহান আল্লাহর এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন হজরত ইব্রাহিম আ:। এই সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমাকে তুলে ধরাই ঈদুল আজহার পশু কোরবানির প্রধান মর্মবাণী। কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের পাশাপাশি মানবিক গুণাবলির বিকাশ সাধন, চিন্তার স্বচ্ছতা, ত্যাগের মহিমা, হৃদয়ের উদারতা সব কিছু মিলে কোরবানির এক স্মরণীয় অধ্যায়।
সুস্থ মস্তিষ্ক, প্রাপ্তবয়স্ক, মুকিম (মুসাফির নয় এমন ব্যক্তি) ব্যক্তিই ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সন্ধ্যা পর্যন্ত নিসাব (সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা অথবা সেই পরিমাণ নগদ অর্থ) পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, তবে তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য জাকাতের নিসাবের মতো সম্পদের এক বছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয়। বরং যে অবস্থায় সাদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হয় ওই অবস্থায় কোরবানিও ওয়াজিব হবে।
নেক আমলগুলোর মধ্যে কোরবানি একটি বিশেষ আমল। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সা: সব সময় কোরবানি করেছেন এবং সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি বর্জনকারী ব্যক্তির প্রতি তিনি সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। মহানবী সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি-সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’
কোরবানির এ ফজিলত হাসিল করতে হলে প্রয়োজন ওই আবেগ, অনুভূতি, প্রেম-ভালোবাসা ও ঐকান্তিকতা যা নিয়ে কোরবানি করেছিলেন আল্লাহর খলিল হজরত ইব্রাহিম আ:। কেবল গোশত ও রক্তের নাম কোরবানি নয়, বরং আল্লাহর রাহে নিজের সম্পদের একটি অংশ বিলিয়ে দেয়ার এক দৃপ্ত শপথের নাম কোরবানি। গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করলে তা আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। কেননা আল্লাহ তায়ালার কাছে গোশত ও রক্তের কোনো মূল্য নেই। মূল্য আছে কেবল তাকওয়া, পরহেজগারি ও ইখলাসের। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, আল্লাহর কাছে কখনো জবাইকৃত পশুর গোশত ও রক্ত পৌঁছবে না, পৌঁছবে কেবল তাকওয়া (সূরা হজ : ৩)।
অতএব, আমাদের একান্ত কর্তব্য, খাঁটি নিয়তসহকারে কোরবানি করা এবং তা থেকে শিক্ষার্জন করা। নিজেদের আনন্দে অন্যদের শরিক করা ঈদুল আজহার শিক্ষা। কোরবানিকৃত পশুর গোশত তিন অংশে ভাগ করে এক অংশ নিজের জন্য সংরক্ষণ, দ্বিতীয় অংশ আত্মীয়স্বজনকে প্রদান এবং তৃতীয় অংশ সমাজের অভাবগ্রস্ত ও দরিদ্রদের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া ইসলামের বিধান। কোরবানিকৃত পশুর চামড়া অনাথ আশ্রম, এতিমখানা ও মাদরাসার দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ভরণপোষণের জন্য প্রদান করলে সওয়াব হাসিল হয়। এক- দুঃখী মানুষের সাহায্য; দ্বিতীয়- দ্বীনি শিক্ষার বিকাশ। প্রকৃতপক্ষে কোরবানিদাতা কেবল পশুর গলায় ছুরি চালায় না বরং সে তো ছুরি চালায় সব প্রবৃত্তির গলায় আল্লাহর প্রেমে পাগলপারা হয়ে। এটিই কোরবানির মূল নিয়ামক ও প্রাণশক্তি। এ অনুভূতি ব্যতিরেকে যে কোরবানি করা হয় তা হজরত ইব্রাহিম ও ইসমাইল আ:-এর সুন্নত নয়, এটি এক রসম তথা প্রথা মাত্র। এতে গোশতের ছড়াছড়ি হয় বটে, কিন্তু ওই তাকওয়া হাসিল হয় না যা কোরবানির প্রাণশক্তি। পশু কোরবানির মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে মানুষের মধ্যে বিরাজমান পশুশক্তি, কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, পরনিন্দা, পরশ্রীকাতরতা প্রভৃতি রিপুগুলোকেই কোরবানি দিতে হয়। আর হালাল অর্থে অর্জিত পশু কোরবানির মাধ্যমে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটানো হয়। আমরা চাই ব্যক্তি, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সব অনিশ্চয়তা-শঙ্কা দূর হোক। হিংসা, হানাহানি ও বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে কোরবানির আনন্দে শামিল হয়ে সবার মধ্যে সাম্য ও সহমর্মিতার মনোভাব জাগিয়ে তুলতে হবে।