গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন এবং সংকট সৃষ্টি করে ফায়দা হাসিল

,

Fakir.Abdur.Razzak's picture
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে মিলিত হয়েছিলেন দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা। আলোচনায় কোন দলের পক্ষ থেকেই (দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া) নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে নাম উল্লেখ করে কেউ প্রস্তাব করেননি। অনেকে বলেছেন পরে নাম পাঠিয়ে দেয়া হবে। তবে বিএনপিসহ বেশিরভাগই নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আবার গঠনের ব্যাপারে আলোচনার তাগিদ দিয়েছেন। বিএনপি তো এজেন্ডা নিয়ে কোন কথাই বলেনি। তারা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থায় আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারেই আলোচনা করতে সম্মত বলে রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি নাকি তার সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার কথা বলেছেন। অর্থাৎ দেশের অধিকাংশ বিরোধীদল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের পক্ষে রাষ্ট্রপতির পদে তাদের মতামত জানিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ করলেও তারা কোন নাম নিয়ে আলোচনা করেনি_ যদিও ওই সময় প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী দেশের বাইরে ভারতের ত্রিপুরা সফরে ছিলেন। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে দায়েরকৃত এক রিট মামলার রায় অনুযায়ী হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে রায় দিয়েছেন। সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের পর জাতীয় সংসদ চূড়ান্তভাবে ওই ব্যবস্থা বাতিল করেছে। উচ্চ আদালতের রায়ে বা পর্যবেক্ষণে অগত্যা দুটি জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে করার যে কথা বলা হয়েছিল জাতীয় সংসদ সেটাও আমলে না নিয়ে ওই ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবেই বাতিল করেছে। এটা এখন দেশের সর্বোচ্চ আইন। তাই যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করতে হয়, তাহলে জাতীয় সংসদের মাধ্যমে আইনটি বাতিল বা সংশোধন করতে হবে। এ অবস্থায় সরকার কী ভাবছে বা কী করা যেতে পারে, তা কেউ জানে না। এদিকে বিএনপি ও তার সহযোগীরা মনে হচ্ছে আগামী দুই বছরে তুমুল আন্দোলন করার চেষ্টা চালাবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারই তাদের চাই।
এরই মধ্যে ড. কামাল হোসেন গা-ঝাড়া দিয়ে তৎপর হয়ে উঠেছেন। তিনিও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে এসেছেন। ওই ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাম উল্লেখ না করে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন_ দেশের বড় বড় আইনজীবীরাও অগণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার পক্ষে কথা বলছেন। ড. কামাল হোসেন দেশের রাজনৈতিক ক্রাইসিসের সময় অতীতেও বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠার ঘটনা দেশের রাজনীতি-সচেতন মানুষ লক্ষ্য করেছে। এখন দেশে সরকারবিরোধী আন্দোলন যখন চাঙ্গা করার চেষ্টা চলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের দাবিতে বিরোধী মহল সোচ্চার হচ্ছে, তখনই ড. কামাল হোসেন তাদের সুরে সুর মিলিয়ে বেশ তৎপর হয়ে উঠেছেন। ১/১১-র সেনাসমর্থিত ড. ফখরুদ্দীন সরকারও দেশে জরুরি আইন জারির সময় দেশের বেশ কয়েকটি মহলের সঙ্গে ড. কামালও ছিলেন তৎপর। তারপর দুই বছর ধরে দুই নেত্রীকে মাইনাস করা, কিংস পার্টি গঠন ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নতুন দল গঠন ঘটনার সময়ও তিনি দারুণভাবে ব্যতিব্যস্ত ছিলেন। বলা হয়, ওই সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে ক'জন উপদেষ্টা নেপথ্যে থেকে কাজ করেছিলেন ড. কামাল হোসেন ছিলেন তাদের অন্যতম। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচন এবং মহাজোটের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর প্রথমে দেশত্যাগ, পরে দেশে ফিরে আইন পেশায় মনোযোগ এবং তার গণফোরাম রাজনীতি থেকেও নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে একেবারে নীরব হয়ে গিয়েছিলেন। এরই মধ্যে গণফোরামে কোন্দল-বিভক্তি প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে, তবু তিনি রাজনীতির ব্যাপারে আর উৎসাহী ছিলেন বলে মনে হয়নি। বেশ কিছুকাল এভাবে কাটিয়েই গত কয়েক মাস তিনি আবার তৎপর হয়ে উঠেছেন। দলের কর্মকা- না থাকলেও প্রায় প্রতিদিনই ড. কামালের কোন না কোন বিবৃতি বা খবর সংবাদপত্রে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইদানীং তিনি বিএনপি-জায়ামাত ও অন্যদের সুরে সুর মিলিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের প্রশ্নে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। এমনকি যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়ার ব্যাপারেও তিনি লাজ-লজ্জা ভুলে গিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
রাজনীতির ব্যাখ্যায় ড. কামাল সর্বদাই ঘড়েল রাজনীতিক এবং গভীর পানির মাছ হিসেবে বিবেচিত 'তিনি যখন আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন তখন অগত্যা দু'বার তার রহস্যজনক সংগঠনবিরোধী তৎপরতার দরুন দল থেকে তিনি বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। মূলত পশ্চিমা রাজনীতির তলপিবাহক ড. কামল পঁচাত্তরের আগস্টের পর প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন আওয়ামী লীগকে প্রগতিশীল রাজনীতির ধারার বাইরে পুঁজিবাদী রাজনীতির পরিপূর্ণ সমর্থক করে গড়ে তোলার জন্য। কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন। সেই থেকে তিনি দলের মধ্যে বিতর্কিত ব্যক্তিত্বে পরিণত হন এবং এ পর্যায়ে দল আর তার নেতৃত্বের প্রয়োজন বোধ করেনি। জাতীয় বা দলীয় রাজনীতিতে যখনই কোন সংকট নেমে আসে তখনই তিনি তৎপর হয়ে ওঠেন। সেই সংকট মোচন তার লক্ষ্য নয়, সংকট থেকে ফায়দা লুটাই তার আসল উদ্দেশ্য। ১/১১-র পরও কথা উঠেছিল জাতীয় সরকার গঠনের। সেক্ষেত্রে ড. কামালই হবেন জাতীয় সরকারের প্রধান।
এখন তিনি তৎপর হয়ে উঠেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আবার ফিরিয়ে আনার জন্য। রাজনৈতিক বিরোধ ও সংকট যখন দেশে বৃদ্ধি পায় তখনই দেশের একটি বিশেষ মহল তৎপর হয়ে ওঠে, আর সেই মহলের অঘোষিত নেতা হয়ে বসেন ড. কামাল হোসেন। কিছুদিন আগে তিনি যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন ও বিচার প্রসঙ্গে এমন মন্তব্য করেছিলেন, যা বিচার কার্যক্রমের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারত। তার সেই বক্তব্যের পর দেশব্যাপী প্রতিবাদ-ঘৃণা প্রকাশ পেয়েছে। ঘাতক, দালাল নির্মূল কমিটি তো তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ ও নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। অথচ ১৯৭৩ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার সংক্রান্ত আইনটি রচনার ব্যাপারে তারও হাত ছিল। সংবিধানের খসড়া রচনা কমিটির তিনিই তখন প্রধান ছিলেন। প্রায় ৪০ বছর পরে এসে তিনি কোন স্বার্থ উদ্ধারের উদ্দেশে জাতীয় স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের জঘন্য শত্রু, তাদের কৃতকর্ম এবং দেশের আপামর মানুষের দাবি (যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার চিহ্নিত শত্রুদের বিচার করতেই হবে) ভুলে গিয়ে ভিন্ন অবস্থান নিলেন? তাহলে কি ধরে নিতে হবে, দেশে অবিলম্বে রাজনৈতিক সংকট নেমে আসছে বুঝতে পেরে ড. কামাল গং এখনই তৎপর হয়ে উঠেছেন?
রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সঙ্গে সম্প্রতি যে রাজনৈতিক সংলাপ সমাপ্ত হয়েছে, তাতে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের পক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরেছেন। তারা কেউই স্পষ্টভাবে নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে তেমন কোন আগ্রহ দেখাননি। সর্বশেষ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিদলও নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রশ্নে সুনির্দিষ্ট কোন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেননি। তারা মনে হয় তাদের পূর্ব অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসে বলেছেন_ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গঠনের প্রশ্নে রাষ্ট্রপতি যদি কোন সংলাপে ডাকেন তাহলে তারা আলোচনা করতে রাজি। সংবাদপত্রে প্রকাশিত তাদের বক্তব্যে সেটাই প্রতিভাত হয়েছে। দৃশ্যত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সংবিধান সংশোধন হয়েছে। কিন্তু দেশের স্বার্থেও শুভ লক্ষণ। সংসদীয় গণতন্ত্রে নির্বাচিত জনপ্রতিধিরাই দেশ ও সরকার পরিচালনা করবে_ এটাই আন্তর্জাতিকভাবে সত্য ও মোদ্দা কথা। এর কোন প্রকার ব্যত্যয় ঘটলেই গণতন্ত্রের আদর্শ ও রাজনীতি লঙ্ঘিত হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সে বিবেচনায় খ-কালীন সময়ের জন্য হলেও যে তা অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, দেশ-বিদেশের কোন গণতন্ত্রকামী মানুষই এটা মেনে নিতে পারে না। তবু একদা দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বিএনপির ঘোর আপত্তি সত্ত্বেও দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন হয়েছিল। আজ আবার যদি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ওই ব্যবস্থার পুনর্বহাল করতে হয়, তাহলে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে সব দলের মতামতসাপেক্ষে দুইটি মেয়াদের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আবার সংবিধান সংশোধন না করেও সবার সঙ্গে আলোচনা করে গ্রহণযোগ্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা গঠন করা যেতে পারে। যাদের কাজ হবে তিন মাসের মধ্যে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে সংলাপ করেছেন। সংলাপে অনেক দলের পক্ষ থেকেই সার্চ কমিটি গঠন, আইন প্রণয়ন, কমিশনার নিয়োগের প্রশ্নে নীতিমালা করা ইত্যাদি কথা বলেছেন। অবশেষে সংলাপ শেষে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে একটি আইন প্রণয়নের প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠানোর কথা চিন্তা করেছেন। সরকারি দল এ প্রসঙ্গে বলেছে_ রাষ্ট্রপতি তেমন প্রস্তাব দিলে জাতীয় সংসদে তা বিবেচনা করা হবে। বর্তমান আইন বা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন নিয়োগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির; তবে সে প্রস্তাব আনতে হবে সরকারের পক্ষ থেকে। এই সীমাবদ্ধতার কারণে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আহূত ওই সংলাপ সম্পর্কে অনেকেই 'অহেতুক কালক্ষেপণ' বলে মন্তব্য করেছেন। তবে এই সংলাপের ইতিবাচক দিক হলো_ অতীতে কখনই নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি সব দলের সঙ্গে এভাবে সংলাপে বসে কোন পরামর্শ চাওয়ার নজির নেই। সেদিক থেকে বর্তমান রাষ্ট্রপতি একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। আলোচনার ফল যা-ই হোক না কেন, সব দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বসেছিলেন_ এটাই চলমান রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক দিক। এ উদাহরণ ভবিষ্যতে অন্যান্য ক্ষেত্রে শুভ কোন ফলও বয়ে আনতে পারে। তবে নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে আমাদের অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়_ কোন নির্বাচন কমিশনই অতীতে যেমন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি, তেমনি ভবিষ্যতেও হবে বলে মনে হয় না। এ অবস্থায় বহুমুখী আক্রমণ, অবজ্ঞা, নিন্দা ও প্রত্যাখ্যান করার নানা ঘটনার পর বর্তমান ড. শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন শেষে দু-একটি মহল ছাড়া সবার কাছেই এক ধরনের গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। আর সেটা পেয়েছে কমিশনের সাধ্যমতো নিরপেক্ষ কর্মতৎপরতার উদাহরণ সৃষ্টির কারণে।
ড. শামসুল হুদা ও তার দুই সদস্য নিজেদের দেশবাসীর সামনে প্রমাণ করেছেন, নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তারা ছিলেন নিরপেক্ষ এবং তাদের অধীনে অনুষ্ঠিত সবগুলো নির্বাচন যতদূর সম্ভব তারা নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার আন্তরিক চেষ্টা করেছিলেন। সে প্রচেষ্টায় তারা এতখানি সফল হয়েছেন যে, অতীতে তেমন সাফল্যের পরিচয় কেউ দিতে পারেননি। তাই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দু-একটি দলের প্রস্তাবের কথা না বলেও আমরা মনে করি আইন প্রণয়ন করে হলেও বর্তমান নির্বাচন কমিশনকেই আর এক মেয়াদের জন্য নিয়োগ দেয়া সবচেয়ে বেশি যুক্তিযুক্ত হবে। কারণ বর্তমান কমিশন এখন সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে অনেক বেশি অভিজ্ঞ। এই অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যও নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কমিশনকে ছয় মাস থেকে এক বছর অপেক্ষা করতে হবে, যা বর্তমান কমিশনের দরকার হবে না। এ অবস্থায় আরও দুজন নতুন কমিশনার অর্থাৎ মোট পাঁচজনের দ্বারা কমিশন গঠনের স্বার্থে রাষ্ট্রপতি যদি একজন নতুন কমিশনার নিয়োগে বিএনপিসহ সব বিরোধী মহলের পক্ষ থেকে একজনের নাম প্রস্তাবের সুযোগ দেন এবং অন্যজন আওয়ামী লীগসহ তাদের সহযোগী সব রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নাম প্রস্তাবের সুযোগ দেন, তাহলে সংকট নিরসন করা মোটেই দুঃসাধ্য হবে না; বরং সেটাই হবে দেশবাসীর কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য।
তবে সার্বিকভাবে দেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার স্বার্থে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের কোন বিকল্প নেই। নির্বাচন কমিশনকে সর্বোচ্চ শক্তিশালী সংস্থা রূপে গঠন করতেই হবে। সেজন্য কমিশনের জনবল, প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনী, প্রশাসনিক ক্যাডার, প্রয়োজনীয় বাজেট দিতে হবে এবং নির্বাচন পরিচালনায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী গ্রহণের প্রচলিত নিয়মের পরিবর্তন করতে হবে কমিশনের নিজস্ব প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনী দ্বারা। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন হবে স্বশাসিত একটি প্রতিষ্ঠান, যা পরিপূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে তার দায়িত্ব পালন করবে। তারা কেবল দায়বদ্ধ থাকবে দেশের রাষ্ট্রপতির কাছে।
এ কথা আজ আর অস্বীকার করা যাবে না, গত পাঁচ বছর দেশে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে তা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হয়েছে দেশবাসীর কাছে। এমনকি আন্তর্জাতিক মহলও সেসব নির্বাচন নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য করেনি। শতভাগ সাফল্যের দাবি কেউ করে না, কিন্তু যতখানি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হলে নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় সাবেক তৃতীয় বিশ্বের এসব ক্ষেত্রে পশ্চাৎপদ দেশে তেমন ভালো নির্বাচন বর্তমান কমিশন জাতিকে উপহার দিতে সক্ষম হয়েছে। সেজন্য বিএনপি বা অন্য কিছু দল ধন্যবাদ দিতে না পারলেও দেশবাসী তাদের তা দেবে। যদি দেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিক চর্চা অব্যাহত রাখা যায় তাহলে অদূর ভবিষ্যতেই দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা শত ভাগ সাফল্যের দাবি করার পর্যায়ে পেঁৗছতে সক্ষম হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সে অবস্থায় দেশে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করে যারা ফায়দা হাসিল করতে চায় তারাও প্রমাদ গুনতে বাধ্য হবে।

Partner site : online news / celebrities /  celebrity image
website design by Web School.

0 comments to “গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন এবং সংকট সৃষ্টি করে ফায়দা হাসিল”

Post a Comment