Sat, 21/01/2012 - 11:57am | by Ranesh.Maitra
গত ১১ নভেম্বর প্রকৃতই আমাদের দেশের নারী-পুরুষের সম-অধিকার
প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত প্রত্যাশিত ও গুরুত্বপূর্ণ দিন বলে
বিবেচনা করা রাষ্ট্রীয়ভাবেই সঙ্গত হবে। ওই দিন, অর্থাৎ বিয়ের দিনই
ফারজানা ইয়াসমিন নিপা নামের এক তরুণী যৌতুক নামের সামাজিক কুপ্রথার কাছে
বিন্দুমাত্র আত্মসমর্পণ না করে, সবার সামনে তার সদ্যবিবাহিত স্বামী শওকত
আলী খান হিরণকে দ্বিধাহীন তালাক দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। যে কি না একটি
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক বলে এটি একটি নতুন,
অশ্রুতপূর্ব এবং অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত একটি ঘটনা। আরও বিস্ময়কর এই যে,
স্বয়ং একজন মহিলা হয়ে ওই পাষ-ের ফুফু, যিনি অন্য একটি প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা, তাহমিনা বেগম কী করে যৌতুক চাইতে পারলেন।
তাদের কি জানা নেই, যৌতুক প্রথা বাংলাদেশে নিষিদ্ধ? তারা কি জানেন না, কত
প্রতিশ্রুতিশীল ও প্রতিভাময়ী দরিদ্র বাবার মেয়েকে স্রেফ যৌতুক দিতে
সামর্থ্যহীনতার কারণে অকালে অযৌক্তিকভাবে খুন করা হয়েছে এবং হচ্ছে? তারা
কি জানেন না, এর ফলে নারীর মর্যাদা দিন দিন শূন্যের কোটায় চলে যাচ্ছে?
বস্তুত এ এক ভয়াবহ রোগ, যা গ্রাস করে চলেছে গোটা সমাজকে_ বিশেষ করে আমাদের
তথাকথিত শিক্ষিত সমাজকে। এক্ষেত্রেও দেখা যায় বর এবং তার ফুফু উভয়েই
শিক্ষিত এবং পেশায় শিক্ষক। কী শিক্ষা তারা অর্জন করেছেন এবং কী শিক্ষাইবা
বিতরণ করছেন তারা? এই শিক্ষা, এই শিক্ষক, এই জাতীয় শিক্ষকতার হাত থেকে
রেহাই পেতে বাংলাদেশের নারীদের আন্দোলনের পাশাপাশি নারী-পুরুষের সম-অধিকার
প্রতিষ্ঠার জন্য সোচ্চার হতে হবে। নারী সংগঠন এবং দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ও
সব বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী সমাজও এ ব্যাপারে সোচ্চার হবে বলে আশা করি।
অবাক হয়েছি যখন ২৬ নভেম্বরের দৈনিক ইত্তেফাকে দেখলাম, ফারজানা ইয়াসমিন
নিপার সাহসী ভূমিকাকে আবার কেউ কেউ বাড়াবাড়ি হিসেবে বলেছেন এবং মেয়েদের
এতটা অহমিকা দেখানো উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন। এই তথাকথিত ব্যক্তি কারা
তা জানি না, তবে বুঝি এরাই সমাজের যা কিছু কল্যাণকর, যা কিছু সুন্দর, যা
কিছু প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয়, তারই বিরোধী এরা। নিন্দুক বলেও অভিহিত করতে
হয় সমাজের এ জাতীয় কীটকে।
গত ২৫ নভেম্বর দৈনিক ইত্তেফাকে দেশে নারী নির্যাতন কী ভয়াবহ রূপ
নিয়েছে তার একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে। ওই তথ্য পড়লে যে কোন মানবিক
অনুভূতিসম্পন্ন মানুষের মনেই প্রশ্ন উঠবে, আমরা কি প্রকৃতই বর্বর যুগে ফিরে
যেতে চলেছি? আমার প্রিয় পাঠক-পাঠিকাদের বিষয়টি স্মরণে আনার লক্ষ্যে ওই
তথ্যচিত্রটি নিচে উদ্ধৃত করছি_
ইত্তেফাকের শিরোনামটি ছিল 'দশ মাসে বেআইনি ফতোয়া ৫৬'। নিচে বলা আছে সহিংসতার শিকার ৫ হাজার ৮৩৯ নারী। ধর্ষিত ৫৬৭ এবং যৌতুকের বলি ২৯৪।
ইত্তেফাকের শিরোনামটি ছিল 'দশ মাসে বেআইনি ফতোয়া ৫৬'। নিচে বলা আছে সহিংসতার শিকার ৫ হাজার ৮৩৯ নারী। ধর্ষিত ৫৬৭ এবং যৌতুকের বলি ২৯৪।
'পরিবারই বিশ্ব শান্তির উৎস, সামরিকতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করি, নারীর প্রতি
সহিংসতা প্রতিরোধে ঐক্য গড়ি' এই প্রতিপাদ্য নিয়ে গত ২৫ নভেম্বর পালিত
হলো আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস। 'বেআইনি সালিসে
বিচারবহির্ভূত শাস্তি দেয়ার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলুন'_ এই
আহ্বানে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নারী
নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন করছে। মানবাধিকার
কর্মীরা বলছেন, দেশে বিদ্যমান আইন থাকার পরও গ্রামের মাতব্বররা শত শত
মানুষের সামনে ফতোয়ার নামে দোররা মারা, তওবা পড়া, একঘরে করে রাখাসহ
বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে পুলিশ ও
প্রশাসন বিষয়টিকে অবজ্ঞা করে চলেছে। বেসরকারি সংগঠনগুলোও কার্যকর উদ্যোগ
নিচ্ছে না। ফতোয়ার এসব ঘটনায় মূলত শাস্তি পাচ্ছে নারীরাই।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী ১৪টি জাতীয় দৈনিকের নারী
নির্যাতন সংক্রান্ত প্রকাশিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ বছর ২০১১ সালের
জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৩৩ ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছে ৫
হাজার ৮৩৯ জন নারী। ১০ মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫৬৭ জন নারী, গণধর্ষণের
শিকার হয়েছে ১৪৫ জন, যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে ২৯৪ জনকে, যৌতুকের
কারণে এবং শারীরিক কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৫৮০ জন, গৃহপরিচারিকা
হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৪৮টি। বাংলাদেশে যৌতুক, পারিবারিক ও যৌন হয়রানি, বেআইনি
ফতোয়া, এসিড সন্ত্রাস এবং হত্যাকা-ের শিকার হচ্ছে নারীরা। এমন সব ঘৃণ্য
নির্যাতনের শিকার হয়ে নারীরা ক্রমেই মানসিক ভারসাম্যহীনতা হারাচ্ছে, ঢলে
পড়ছে অকাল মৃত্যুর কোলে। কখনোবা তারা অভিশপ্ত জীবনের জ্বালা থেকে
চিরমুক্তি পেতে বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার পথ। এ বছর দশ মাসে আত্মহত্যার ঘটনা
ঘটেছে ৪০০টি।
গত ২০০২ সাল থেকে ২০১১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৪৯৩টি ফতোয়ার ঘটনা ঘটেছে। ২০০২ সালে ঘটে ৩৯টি ফতোয়ার ঘটনা, ২০০৩ সালে ৪৪টি, ২০০৪ সালে ৫৯টি, ২০০৫ সালে ৬৯টি, ২০০৬ সালে ৬৬টি, ২০০৭ সালে কমে দাঁড়ায় ২১টিতে (তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথম আমলে), ২০০৯ সালে ফতোয়ার ঘটনা ঘটে ৪৮টি, ২০১০ সালে ৩৯টি এবং এ বছর ১০ মাসেই ঘটেছে ৫৪টি ফতোয়ার ঘটনা।
বিশিষ্ট আইনজ্ঞরা বলেন, ফতোয়ার মাধ্যমে যে শারীরিক শাস্তি দেয়া হচ্ছে সেটা আইনের চোখে জখম করার শামিল। যারা ফতোয়ার নামে বেত্রাঘাত, দোররা বা অন্যান্য শাস্তি দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩২৩ ও ৩২৬ ধারায় মামলা করা যায়। যে অপরাধগুলো করা হচ্ছে, সেগুলো প্রমাণ করা খুবই সহজ। কারণ অনেকে মিলে প্রকাশ্যে এক বা একাধিক মানুষকে বিচারের নামে জখম বা গুরুতর জখম করেছে। তারা বলেন, সংবিধানের ৩১ থেকে ৩৫ অনুচ্ছেদে বলা আছে, নির্দিষ্ট আদালতের দ্বারা নির্দিষ্ট অপরাধের বিচার হতে পারে। কিন্তু কার্যত দেখা যাচ্ছে, ফতোয়াবাজরা আইন, বিচার ব্যবস্থা ও সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নারী নির্যাতন অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে, মৌলবাদকেও উসকানি দিয়ে চলেছে_ যা আমাদের দেশকে গোটা পৃথিবীর কাছে একটি অসভ্য ও বর্বর দেশ হিসেবে পরিচিত করছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের সব স্তর থেকে অত্যন্ত জোরালো ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।
গত ২০০২ সাল থেকে ২০১১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৪৯৩টি ফতোয়ার ঘটনা ঘটেছে। ২০০২ সালে ঘটে ৩৯টি ফতোয়ার ঘটনা, ২০০৩ সালে ৪৪টি, ২০০৪ সালে ৫৯টি, ২০০৫ সালে ৬৯টি, ২০০৬ সালে ৬৬টি, ২০০৭ সালে কমে দাঁড়ায় ২১টিতে (তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথম আমলে), ২০০৯ সালে ফতোয়ার ঘটনা ঘটে ৪৮টি, ২০১০ সালে ৩৯টি এবং এ বছর ১০ মাসেই ঘটেছে ৫৪টি ফতোয়ার ঘটনা।
বিশিষ্ট আইনজ্ঞরা বলেন, ফতোয়ার মাধ্যমে যে শারীরিক শাস্তি দেয়া হচ্ছে সেটা আইনের চোখে জখম করার শামিল। যারা ফতোয়ার নামে বেত্রাঘাত, দোররা বা অন্যান্য শাস্তি দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩২৩ ও ৩২৬ ধারায় মামলা করা যায়। যে অপরাধগুলো করা হচ্ছে, সেগুলো প্রমাণ করা খুবই সহজ। কারণ অনেকে মিলে প্রকাশ্যে এক বা একাধিক মানুষকে বিচারের নামে জখম বা গুরুতর জখম করেছে। তারা বলেন, সংবিধানের ৩১ থেকে ৩৫ অনুচ্ছেদে বলা আছে, নির্দিষ্ট আদালতের দ্বারা নির্দিষ্ট অপরাধের বিচার হতে পারে। কিন্তু কার্যত দেখা যাচ্ছে, ফতোয়াবাজরা আইন, বিচার ব্যবস্থা ও সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নারী নির্যাতন অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে, মৌলবাদকেও উসকানি দিয়ে চলেছে_ যা আমাদের দেশকে গোটা পৃথিবীর কাছে একটি অসভ্য ও বর্বর দেশ হিসেবে পরিচিত করছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের সব স্তর থেকে অত্যন্ত জোরালো ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।
কিন্তু কে শোনে কার কথা? ফতোয়া যেমন শারীরিকভাবে ভয়াবহ; যৌতুক একাধারে
শারীরিক, মানসিক, পারিবারিকসহ সব ক্ষেত্রে ভয়াবহ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
দেখা যায়, কোন ছেলে কার চেয়ে কত বেশি যৌতুক আদায় করতে পারলেন, তার মধ্যে
যেন এক ধরনের সম্মানবৃদ্ধি বা মর্যাদাবৃদ্ধির নিশানা অনেকে খুঁজে পান।
আবার কনে পক্ষের এক অংশও তেমনি জামাইকে কত বেশি যৌতুক দিলেন, মেয়েকে কত
বেশি ও কত দামি গহনা, কাপড়-চোপড় দিলেন তা দ্বারা যেন সামাজিক এবং
বংশমর্যাদার নতুন মাত্রা যোগ করতে পারলেন বলে মনে করেন অনেকে। কিন্তু ছেলে
পক্ষের মাথায় এ কথাটি ঢোকে না যে এর দ্বারা তারা যেন মেয়ে পক্ষের কাছে
ভিক্ষুক সেজে গেলেন। মেয়ে পক্ষের মাথায় ঢোকে না যে তারা কি ওই ছেলেটিকে
কন্যাদান করার বিনিময়ে তাকে বাড়তি মূল্যে কিনে নিচ্ছেন ছেলে পক্ষের
নির্ধারিত দাম অনুযায়ী। তারা উভয়পক্ষই উভয়পক্ষের কাছে প্রকৃত অর্থে
হেয়প্রতিপন্ন হলেন_ মেয়ের মনটাকে ছোট করে দিলেন_ দেশের আইন ও সংবিধানকেও
বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেন এবং নারী-পুরুষের সমঅধিকারের প্রশ্নটিকে শিকেয় তুলে
দিলেন। অবশ্য এমন ঘটনা আজকাল শুধু প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের
মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, তা ছড়িয়ে পড়েছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও। ছড়িয়েছে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারদের মতো উচ্চশিক্ষিত
ব্যক্তিরা ছাড়াও মধ্যবিত্তদের সব স্তরে। তাই আজ এই যৌতুক প্রথা আমাদের
সমাজকে যেমন গ্রাস করে ফেলছে, তেমনি আবার তা খেদিয়ে বিদেয় দিচ্ছে আমাদের
সুপ্রাচীন হাজার বছরের সভ্যতাকেও। তাই আর বিন্দুমাত্র কালবিলম্ব না করে আরও
কঠোর আইন প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন সুনিশ্চিত করা অবশ্যই প্রয়োজন। যেমন
যারা যৌতুক চাইবেন তাদের কোথাও চাকরি তো দেয়া হবেই না, বরং তাদের বিরুদ্ধে
ফৌজদারি মামলা দায়ের করে কঠোরতম শাস্তির বিধান করতে হবে। যৌতুক প্রথার
প্রতি সামাজিক ঘৃণা জাগিয়ে তোলার জন্য স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের
পাঠ্যপুস্তকে এর কুফলে নারী-পুরুষের মর্যাদা কিভাবে বিনষ্ট হয়, দাম্পত্য
জীবন কিভাবে কলুষিত হয় তার ওপর সুধীজনদের রচনাতে স্থান দিতে হবে। একই
সঙ্গে যে মহিলারা দাবি করার সঙ্গে সঙ্গে যৌতুকসহ বিয়েতে অসম্মতি জানাবেন,
রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের পুরস্কৃত করা প্রয়োজন।
এ সংক্রান্ত বিধি-বিধান, আইন-কানুন এবং তার ফতোয়া সংক্রান্ত আইন-কানুনও
ব্যাপকভাবে প্রচার করার জন্য একদিকে যেমন প্রচার মাধ্যমগুলোর ব্যবহার করা
প্রয়োজন, অন্যদিকে তেমনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এবং সমাজ কল্যাণ
মন্ত্রণালয়েরও তৎপর হওয়া প্রয়োজন_ যাতে তৃণমূল পর্যন্ত সব মানুষকে এ
বিষয়ে অবহিত করা হয় প্রতিবছর। গ্রাম্য যেসব মাতব্বর এবং সরকারি কর্মকর্তা
বা নির্বাচিত প্রতিনিধি বা মাতবর এর বিরুদ্ধে কাজ করবেন_ খবর পাওয়ামাত্র
তাদের গ্রেফতারেরও ব্যবস্থা করতে হবে।
এবারে আসি নারী সংগঠনগুলোর প্রসঙ্গে। তারা এ ব্যাপারে মনিটরিংসহ নানাবিধ
কাজকর্ম করে চলেছেন সত্য এবং এ-ও সত্য যে, তাদের তৎপরতার কারণেই এ জাতীয়
অসংখ্য ঘটনা জানতে পারছেন দেশবাসী। কিন্তু যেহেতু এতসব সত্ত্বেও কোন কাজ
হচ্ছে না বা উল্লেখ করার মতো তেমন কিছু ঘটছে না, তখন এ ব্যাপারে আর কী কী
কর্মসূচি গ্রহণ করে আইন, সমাজ ও সভ্যতাকে রক্ষা করা যায় তা বিশেষভাবে
ভাবতে হবে।
যেহেতু দেশের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা উভয়েই নারী_ তাই এই
বিষয়গুলো প্রতিরোধে তাদের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে নিয়ে তাদের নিজ নিজ
পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। সব মহিলা এমপি দল-মত নির্বিশেষে এ জাতীয়
ঘটনাগুলো ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এবং দায়ীদের
কঠোর শাস্তি দাবি করে সংবাদপত্রগুলোতে যৌথ বিবৃতি প্রদান করবেন এবং
নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেবেন এগুলোর বৈধ প্রতিকারের। যদি তা না করা হয়,
তবে তারা একযোগে সংসদ থেকে পদত্যাগ করে বেরিয়ে এসে স্থানে স্থানে সবাই
মিলে নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত করে ঘটনাগুলোর প্রতিবাদ জানাবেন ও সমাজকে বিশেষ
করে নারী সমাজকে এগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণে এগিয়ে আসার আহ্বান
জানাবেন।
আজ আমাদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন যৌতুক, ফতোয়া এবং সব ধরনের
নারী নির্যাতন আইন ও সভ্যতাবহির্ভূত এবং নারী-পুরুষের সম-অধিকারের
ধারণাবিরোধী হওয়ায় তা কিছুতেই আর ঘটতে দেয়া যাবে না।