সামাজিক যোগাযোগের নতুন ওয়েব সাইট “zurker.net”

,

কোন তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সাইটে এটিই আমার প্রথম লেখা। আমি আগে থেকেই ভুল ভ্রান্তির জন্য আপনাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি ।
আমার প্রথম tweet এ আপনাদেরকে একটি নতুন সামাজিক যোগাযোগ সাইটের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি, যার নাম “ZURKER”।
এই ওয়েবসাইটটির সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক ব্লগ সাইটে।
অন্যান্য social networking website এর মতই এই ওয়েবসাইট । ফারাক শুধু একটাই এই ওয়েবসাইট আপনাকে ওয়েবসাইটটির মালিক হতে সুযোগ দিচ্ছে।
ইউনিক ও চমৎকার আইডিয়া,তাই না। ব্যপারটা নিয়ে হাজির হলাম গুগল মামার কাছে। দেখলাম নাহ ব্যাপাটা সত্যি এবং zurker এর Founder খুবই সিরিয়াস।
“If you ask zurker “What’s the point of Zurker since we already have Facebook and Google+?” their answer is, “Zurker is fundamentally better than FB. FB and G+ are driven by corporations with their corporate goals. Zurker is owned by its members. Its product is designed to do just one thing, work well for the members, and corporate revenue is passed on to the members.”
অর্থাৎ আপনি আমি আর সাধারণ ইউজার এই ওয়েবসাইটের মালিক হতে পারবেন।
ব্যাপারটা আরো খুলে বলছি-
ওয়েবসাইটটি এখন বেটা টেস্টে আছে। অন্যের কাছ থেকে ইনভাইট পেলেই শুধু আপনি সেখানে জয়েন করতে পারবেন। তখন আপনি যদি অন্য কাউকে ইনভাইট করেন (আপনার ফ্রেন্ড/ ফ্যামালি সদস্য), তারা যদি আপনার লিঙ্ক এ ক্লিক করে সরাসরি জয়েন করেন আপনি পাবেন 1 Vshare । আপনি চাইলে সরাসরি ক্যাশ টাকার মাধ্যমে শেয়ার কিন্তে পারবেন সেক্ষেত্রে 1 Vshare = 1 USD সমমূল্যের । প্রতি মেম্বার ৫০০ শেয়ার সংগ্রহ করতে কিংবা কিনতে পারবেন।প্রাথমিক ভাবে ১০০০০০০ টি Vshare এর অপেক্ষায় আছে।
এই ব্যাপারটা কিছুটা জটিল, সরাসরি তাই লিংকটা দিয়ে দিলাম।
About Vshare
ওয়েবসাইটটি uk,us,india,Philippines, New Zealand, Australia এবং Canada এর ইউজারদের জন্য আলাদা ওয়েব পোর্টাল খুলেছে। সেইসাথে বাদবাকি দেশের ইউজার রা শুধু মাত্র জয়েন করতে পারবেন Worldwide পোর্টালের সাহায্যে । তবে ভিন্ন ভিন্ন পোর্টালের মাধ্যমে জয়েন করলেও আপনি Zurker Worlwide এর মেম্বার হয়ে সহজেই Zurker Uk কিংবা US, India এর মেম্বার সাথে কানেক্ট হতে পারবেন।
Zurker কি তবে User Owned Facebook Type Social Network? YES.
তাদের সাইট থেকে-
“Facebook is dominant right now, but it started off as a small startup nobody had ever heard of. Facebook had a clever strategy for growing quickly, and replaced the dominant social networks of the time (MySpace and Friendster). Zurker is starting off as a small startup nobody has ever heard, but we have a clever strategy for growing quickly and developing an awesome product until we replace the dominant social network of our time.”
মনে প্রশ্ন আস্তে পারে এই ওয়েবসাইট কি SCAM?
এখন পর্যন্ত যতদুর জেনেছি, না। তারা একটি ওপেন অ্যাকাউন্ট বই এর মাধ্যমে তাদের হিসাব নিকাশ সবার সাথে প্রকাশ করছে। তাই একজন শেয়ার হোল্ডার হিসেবে আপনি সবকিছু মনিটর করতে পারবেন।
যেহেতু zurker এ জয়েন করা free তাই আমার দৃষ্টিতে এখানে হারানোর কিছু নেই। তাই আপনি ও জয়েন করে দেখতে পারেন। এমন সুযোগ হাতছাড়া করতে যাবেন কেন?
http://www.zurker.net/i-1755-jvrcmgehwa
বিঃদ্রঃ zurker এ এখন শুধুমাত্র অন্যের কাছ থেকে ইনভাইট পেলেই জয়েন করা যায়। তাই আমি আমার রেফারেল লিংকটা এখানে শেয়ার করলাম। আপনি যদি এই রেফারেল লিঙ্ক এ ক্লিক করে জয়েন করেন আমি এর বিনিময়ে ১ টি Vshare পাবো যা আপনার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে যখন আপনি কাউকে ইনভাইট করবেন। যদি আপনার এখনও কোনো কনফিউশন থেকে থাকে তাহলে
Zuker FAQ   পড়ুন।
জয়েন করার পর অবশ্যই
Zurker Guide   টি পড়ে নিবেন ,তাহলে সাইটটির বিভিন্ন ফাংশন ,নেভিগেশন ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা পাবেন।
তাহলে চলুন প্রবেশ করা যাক zurker এর ভুবনে, খুজে নিন সব নতুন ফিচার।

Partner site : online news / celebritiescelebrity image
website design by Web School.
godaddy coupon
Read more

"মসজিদুল আকসা", মুসলমানদের প্রথম কিবলা

,
"মসজিদুল আকসা", মুসলমানদের প্রথম কিবলা যা ধ্বংস করার ঘৃন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে! একজন মুসলিম হিসেবে এটা নিজে জানা এবং অন্যকে জানানো আপনার জন্য জরুরী।**

মসজিদুল আকসা, মুসলমানদের প্রথম কিবলা। এটি জেরুজালেমে অবস্থিত। এই মসজিদটি মুসলমানদের অনেক আবেগের একটি বিষয়। কিন্তু এটাকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা চলছে!!!

উপরের ছবিতে লক্ষ্য করুন, বাম পাশের ছবিতে দেখা যাচ্ছে "আল আকসা" মসজিদ। নিচের ছবিতে দেখুন এর কাছেই আরেকটা মসজিদ তৈরি করা হয়েছে, "আল শাখরা মসজিদ" যেটা ডান পাশের ছবিতে দেখানো হয়েছে। কিন্তু এই শাখরা মসজিদকেই আল আকসা হিসেবে পরিচিত করা হচ্ছে!!! আপনি গুগলে সার্চ দিয়ে দেখবেন আসল আল আকসা মসজিদের পাশাপাশি আল শাখরা মসজিদের ছবিও আসে। এর কারন কি?

এর কারন, ইহুদিরা নতুন প্রজন্মকে আল আকসা মসজিদ সম্পর্কে দ্বিধাবিভক্ত করতে চায়। তারা এই মসজিদ সম্পর্কে মানুষকে জানতে দিতে চায়না।

অনেকে মনে করছেন, ইহুদিরা পরিকল্পনা করেছে এক সময় তারা আসল মসজিদটিকে ধ্বংস করবে আর এটা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে তারা আল শাখরা মসজিদ কে দেখিয়ে বলবে মসজিদের কিছু করা হয়নি।

তবে, যতই পরিকল্পনা করা হোক না কেনও, আল্লাহ সকল পরিকল্পনা নষ্ট করে দিবেন। আল্লাহ তায়ালা নিজেই রক্ষা করবেন এটাকে।

মসজিদে আকসার উপর ইহুদীদের আক্রোশের বিবরণঃ
________________________________
ইসরালীদের প্রথম এবং প্রধান টার্গেট হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের মূল শক্তি তথা কেন্দ্রবিন্দু বায়তুল মোকাদ্দাস বা আল কুদ্স। ১৯৬৭ সালের জুন যুদ্ধের পরে ইসরাইলীগণ “হাইকালে সোলায়মানী' খোঁজার নাম করে ১০ পর্যায়ে খনন কার্য চালিয়েছে। এর উদ্দেশ্য একটাই, বায়তুল মোকাদ্দেসকে ধ্বংস করা। ১৯৬৭ সালে প্রথম পর্যায়ে বাবুল মাগরেবা পর্যন্ত ১৪ মিটার গভীরতায় খনন করেছে। ২য় পর্যায়ে ১৯৬৯ সালে ব্যাপকভাবে মুসলমানদের উৎখাত করা হয় এবং মসজিদুল আকসায় অগ্নি সংযোগ করা হয়। এ সময়ে মসজিদে আকসার ৮০ মিটার দূরে ব্যাপকভাবে খনন কার্য চালানো হয়। ১৯৭০ থেকে ৭২ পর্যন্ত ৩য় পর্যায়ে মসজিদে আকসার দেয়ালের নিচে দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে খনন করা হয় ইসলামী কোর্ট এবং মুসলমানদের বাড়িঘর দখল করে নেয়া হয়। ৪র্থ পর্যায়ে ১৯৭৩ সালে মসজিদের পশ্চিম দেয়ালের নিচে ১৫ মিটার গর্ত করে খনন করা হয়। ৫ম পর্যায়ে ১৯৭৪ সালে পশ্চিম দেয়ালের গর্তকে খননের মধ্যে আরো সম্প্রসারিত করা হয়। ৬ষ্ঠ পর্যায়ে ১৯৭৫-৭৬ সালে পশ্চিম দেয়ালের গর্ত আরো সম্প্রসারিত করা হয় এবং প্রখ্যাত সাহাবীদ্বয় উবাদাহ বিন সামেত এবং শাদ্দাদ বিন আউসের (রা.) কবর থেকে হাড়গোড় সরিয়ে ফেলা হয়। ৭ম পর্যায়ে আকসার আঙ্গিনায় মহিলা মসজিদের নিচ পর্যন্ত খনন করা হয়। ১৯৭৯ সালে ৮ম পর্যায়ে পশ্চিম দেয়ালের নিচেও বোরাক দেয়ালের পার্শ্বে খনন করা হয়। ইহুদীরা সুরঙ্গটি পাকা করে তাদের উপাসনালয় নির্মাণ করলে তদানিন্তন প্রসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী তা উদ্বোধন করেন। ৯ম পর্যায়ে ১৯৮৬ সালে ব্যাপক খনন কার্য চালানো হয়। এ সময় জেরুসালেম থেকে বহু মুসলিম পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়। সেখানকার ফিলিস্তিনি হাসপাতালটি বন্ধ করে দেয়া হয়। ১০ম পর্যায়ে ১৯৮৮ সালে মসজিদ সংলগ্ন ওয়াদী এলাকায় ব্যাপক খনন শুরু করলে মসজিদের নিরস্ত্র রক্ষীরা বাধা দেয়। বাঁধা উপেক্ষা করে ব্যাপকভাবে খনন কাজ চলে। এদের লক্ষ্য ছিল মসজিদ আকসা এবং মসজিদে সাহারার নিচের সকল মাটি ফেলে দেয়া। যাতে করে মসজিদদ্বয় সামান্য ভূকম্পন কিংবা এমনিতেই ধ্বংস হয়। মূলত খনন কাজের এটাই হচ্ছে মূল উদ্দেশ্য। হাইকালে সোলায়মানী খোঁজাটা বাহানা মাত্র।

৬৭'র যুদ্ধ চলাকালীন ইহুদীরা মসজিদে আকসার কয়েকটি জানালা ভেঙ্গে ফেলে ক্ষতি সাধন করে। ১১ জুন তারিখ বোরাক দেয়ালের সামনের মুসলিম বসতিটি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। ১৫ আগস্ট বড় হাখাস ২০ জন ইসরাইলী সামরিক অফিসারকে নিয়ে অস্ত্রসহ মসজিদে প্রবেশ করে এলাপাথারিভাবে গুলী করে এবং পরে প্রার্থনা করে। ৭০ খৃস্টাব্দের আগস্ট মাসে হাইকালে সোলায়মানী ধ্বংসের স্মৃতিতে তারা প্রতিবছর আগস্ট মাসে বায়তুল মোকাদ্দাসে আগ্রাসী তৎপরতা চালায়। ১৯৬৯ সালের ২১ আগস্ট ডেনিল মাইকেল নামক এক অস্ট্রেলিয়ান খৃস্টান মসজিদে আকসায় অগ্নি সংযোগ করে। ইসরাইলী হাইকোর্ট এ ব্যক্তিকে বেকসুর খালাস দেয়। এরই প্রতিবাদে ইসলামী সম্মেলন সংস্খা গঠিত হয়।

১৯৭৬ সালের ৩০ জানুয়ারি ইসরাইলী আদালত মসজিদে আকসার আঙ্গিনায় ইহুদীদের অনুমতি দেয়। ৮০ জন ইহুদী জোর করে মসজিদে প্রবেশ করে গান গেয়ে নামাজে বাঁধা দেয়। ১৯৮০ সালের ১ মে ইহুদীরা বিস্ফোরণের মাধ্যমে মসজিদ ধ্বংস করার চেষ্টা চালায়। তারা পার্শ্ববর্তী গীর্জার ছাদে ১ টনের বেশি বিস্ফোরক দ্রব্য রেখে দেয়। মুসলমানদের সতর্কতায় তারা ব্যর্থ হয়। ১৯৮১ সালের ৯ আগস্ট ইহুদী সংস্খা ‘জোশ' ইযুনিয়ামের ৩শ' সদস্য মসজিদের তালা ভেঙ্গে প্রবশ করে এবং প্রার্থনা আদায় করে। ১৯৮২ সালের ২ মার্চ ১৫ ব্যক্তি সশস্ত্রভাবে মসজিদে ঢুকে পরে একজন রক্ষীকে ছুরিকাঘাত করে। এর প্রতিবাদে জেরুজালেম, গাজা, পশ্চিমতীর এবং নাবলুসে ধর্মঘট হয়। ৩য় মার্চ একইভাবে আরো ১ জন রক্ষীকে আহত করে। ১৯৮২ সালের ১১ এপ্রিল গডম্যান নামক ইহুদী মসজিদে এসে এলোপাথারী গুলী ছোড়ে। এতে মসজিদের ১ জন রক্ষী শহীদ হয় এবং অনেক মুসল্লী হতাহত হয়। মসজিদের পবিত্রতা রক্ষায় এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে ইসরাইলী সৈন্যদের গুলীতে ১শ'র বেশি লোক আহত হয়। ১৯৮৩ সালে রাবী জালমানের শিষ্যরা মসজিদে আকসা আক্রমণ করে। একই বছর ৪২ ইহুদী মসজিদে আগুন দেয়ার চেষ্টা করলে রক্ষীরা তা প্রতিরোধ করে। ১৯৮৪ সালে সন্ত্রাসী ইহুদী ২৯ কেজি বিস্ফোরক দিয়ে মসজিদটি ধ্বংস করার চেষ্টা করে মুসলমানদের সর্তকতার কারণে তা ব্যর্থ হয়। ১৯৮৪ সালে মসজিদে ইসরাইলী পতাকা উত্তোলনের দুটি চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ১৯৮৬ সালে ৯ জানুয়ারি নেসেটের ৮ সদস্য মসজিদে প্রবেশ করলে রক্ষীরা বাধা দেয় এতে সংঘর্ষ বাধলে ১৬ জন মুসল্লী আহত হয়। একইভাবে ১৯৮৭ সালে ৪ঠা আগস্ট ও ৮৮ সালের ১৫ জানুয়ারি হামলা চালিয়ে ৩২ জন মুসুল্লীকে হত্যা করে এবং দুই শতাধীক মুসলিম আহত হয়। ১৯৯০ সালের ৮ অক্টোবর ইহুদীরা মুসুল্লীদের উপর নির্বিচারে গুলী চালায়। এতে ২ জন শহীদ হয় এবং ১০০ আহত হয়।

See the link below for more information
al aqsa in wikipedia http://en.wikipedia.org/wiki/Al-Aqsa_Mosque
http://en.wikipedia.org/wiki/Dome_of_the_Rock 
Read more

বাংলা ব্যাকরণ

,

আজ আমাদের এক বড় দিন। আমাদের দেশের স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তিতে এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশততম জন্মবার্ষিকীতে বাংলা ভাষার ৩৩ জন পণ্ডিত আমাদের জন্য প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ রচনা করে আমাদের করেছেন ‘সম্মানিত ও সহায়বান’।
শেষোক্ত শব্দ দুটি রবীন্দ্রনাথ বড় আশা করে ১৩০৮ সালে উচ্চারণ করেছিলেন। বাঙালির দ্বৈধ ও দ্বিমত প্রবণতা সত্ত্বেও যে ব্যাকরণসমবায় রচিত ও প্রকাশিত হলো তাতে আমরা গর্বিত ও পুলকিত।
লাতিন ভাষার রবরবা সম্পর্কে বলতে গিয়ে Charlton Laird তাঁর The Meaning of Language (১৯৫৩) গ্রন্থে বলেন, ‘বেশ স্বাভাবিকভাবেই পণ্ডিতেরা ধরে নেন যে লাতিন ব্যাকরণ শুধু লাতিন ব্যাকরণই নয়, এ স্বয়ং ব্যাকরণ। তাঁরা এর থেকে ঋণ করেন এবং তার বেশ সদ্ব্যবহার করেন।’ এমন ধারণা ভারতবর্ষে সংস্কৃত ভাষা সম্পর্কে বিদ্যমান ছিল। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী সেই বেলুনে প্রথম খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘সংস্কৃত হলো বাংলার অতি-অতি-অতি-অতি-অতি-অতিবৃদ্ধ প্রমাতামহী।’ রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘ভাষার ইঙ্গিত’ প্রবন্ধে বলেন, ‘সংস্কৃত ভাষার যোগ ব্যতীত বাংলার ভদ্রতা রক্ষা হয় না এবং বাংলা তাহার অনেক শোভা ও সফলতা হইতে বঞ্চিত হয়, কিন্তু তবু সংস্কৃত বাংলার অঙ্গ নহে, তাহা তাহার আবরণ, তাহাতে লজ্জা রক্ষা, তাহার দৈন্য গোপন, তাহার বিশেষ বিশেষ প্রয়োজন সাধনের উপায়।’
১৩০৮ সালে বাংলা ব্যাকরণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে ‘বাংলা ব্যাকরণ’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘বস্তুত প্রত্যেক ভাষার নিজের একটা ছাঁচ আছে, ...... ভাষার সেই প্রকৃতিগত ছাঁচটা বাহির করাই ব্যাকরণের কাজ। সংস্কৃত ও অন্য ভাষার আমদানিকে কী ছাঁচে ঢালিয়া আপনার করিয়া লয়, তাহাই নির্ণয় করিবার জন্য বাংলা ব্যাকরণ।’
উপরোল্লিখিত গ্রন্থ The Meaning of Language-এ Charlton Laird বলেন, ‘ব্যাকরণ একপ্রস্থ নিয়ম-বিধি নয়, এ এমন এক জিনিস যা ভাষার মধ্যেই নিহিত রয়েছে এবং এ ছাড়া ভাষার অস্তিত্ব নেই। এ আবিষ্কার করা যায়, কিন্তু উদ্ভাবন করা যায় না।’
আমাদের ভাষার অভিধান-ব্যাকরণের আবিষ্কার বিদেশিদের হাতে। প্রকাশিত গ্রন্থটি যাঁদের নামে উর‌্যাসর্গ করা হয়েছে তাঁরা মানুয়েল দা আসসুম্পসাঁও থেকে ব্রাদার জেমস পর্যন্ত ১৩ জন। আমি ই এস বিকোভার রুশ ভাষায় রচিত এবং হানা রুথ টমসনের ইংরেজি ভাষায় রচিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ চোখে দেখিনি। ভাগ্যবান পাঠকগণ যাঁদের ওই গ্রন্থদ্বয়ের সঙ্গে পরিচয় রয়েছে তাঁরা আমাদের ব্যাকরণটির তুলনামূলক আলোচনা করার সুযোগ পাবেন।
ভাষাতত্ত্ব ও ব্যাকরণ একই সীমানাবিশিষ্ট (Coterminous) নয়। দুই শাস্ত্রের মধ্যে চলাচল থাকলেও তাদের চৌহদ্দি হুবহু এক নয়। বিশেষ করে একটি বিশেষ ভাষার ব্যাকরণ তো নয়ই। এ জন্য আমার মনে হয় ভাষাতত্ত্বের ওপর কিছু আলোচনা বিশেষ করে ব্যাকরণের দ্বিতীয় ভাগের ক্ষেত্রে আমার কাছে প্রক্ষিপ্ত মনে হয়েছে। এই ব্যাকরণটি দুই খণ্ডে না হয়ে এক খণ্ডে সম্পন্ন হলে অনেক ব্যবহার-সহায়ক হতো। আমার অবস্থা এখন সেই নরসুন্দরের মতো, যিনি নরুণ দিয়ে ফোঁড়া কাটতে পারতেন। তিনি শৈল্য চিকির‌্যাসাবিদ্যা অধ্যয়নের পর ফোঁড়া দেখলে থরহরি কম্পমান হন। আমাদের জন্য একজন রাজশেখর বসু এবং একটা চলন্তিকা ব্যাকরণ একান্ত প্রয়োজন। ‘বাংলা ব্যাকরণ’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘অভিধান-ব্যাকরণ অর্থের লোহার সিন্দুক— তাহারা অর্থ দিতে পারে না, বহন করিতে পারে। চাবি লাগাইয়া সেই অর্থ লইতে হয়।’ আর আমি বলি, সেই চাবি পেতে আমাদের বাংলা ভাষার রেওয়াজ করতে হবে।
ভাষাতত্ত্বের আদলে ব্যাকরণের যেসব দুরূহ পারিভাষিক ব্যবহার করা হয়েছে তার পক্ষে রবীন্দ্রনাথকে আমি সাক্ষ্য মানি। কবি তাঁর বিশ্বপরিচয় গ্রন্থে বলেন, ‘পারিভাষিক চর্ব্য জগতের জিনিস, দাঁত ওঠার পথে যেটা পথ্য।’ এ কথা বলা হলেও তিনি বলেন, ‘ভোজনের যেমন আনন্দ আছে তেমনি তার মূল্যও আছে, ছেলেবেলা থেকে মূল্য ফাঁকি দেওয়া অভ্যাস হতে থাকলে যথার্থ আনন্দের অধিকারকে ফাঁকি দেওয়া হয়। চিবিয়ে খাওয়াতেই একদিকে দাঁত শক্ত হয় আর একদিকে খাওয়ার পুরো স্বাদ পাওয়া যায়।’ পারিভাষিক নির্মিত শব্দগুলো বাংলা বলে পরিচয় নিবিড় হতে আমাদের তেমন সময় লাগার কথা নয়। এ ব্যাকরণ পড়তে আমার যত কষ্টই হোক না কেন, আমার কোনো রকম বিরক্তিসূচক কোনো দন্ত্যসশীর‌্যাকার ধ্বনি উচ্চারণ করার অধিকার নেই। আমি সজোরে একটা ওষ্ঠ্যশীর‌্যাকার ধ্বনি উচ্চারণ করে একে চুম্বন করে আমার বক্তব্য শেষ করছি। আপনাদের জয় হোক।

Partner site : online news / celebrities /  celebrity image
website design by Web School.
Read more

সারী নদী আমার বোন, পাহাড় আমার ভাই

,

একজন আদিবাসী মানুষের কাছে নদী তার বোনের মতো, আর পাহাড় হলো তার ভাই। প্রকৃতি ও ধরিত্রী সম্পর্কে এ রকম জীবনদর্শন থাকলে আজ পৃথিবীতে এত পরিবেশ বিপর্যয় হতো না, মানুষ নদীর ওপর নগদ লাভের জন্য বাঁধ দিত না, নদী খুঁড়ে পানি দূষিত করত না। নদী যদি আমাদের বোন হয়, তবে আমরা তো তার ওপর অত্যাচার করতে পারি না, তাকে ধ্বংস করতে পারি না। টিপাইমুখ বাঁধ বা জাফলংয়ে পিয়াইন নদীর ওপর পাথর উত্তোলন মেশিনের অত্যাচার রাষ্ট্র ও মানুষের আধুনিক উন্নয়নচিন্তার ফসল, যা সুদূরপ্রসারী ক্ষতি ডেকে আনবে ভবিষ্যর‌্যা প্রজন্মের জন্য। আজকের উন্নয়নভাবনা ও রাজনীতি নগদ হিসাবের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ভবিষ্যর‌্যা প্রজন্মের কী হবে, এই ভাবনা এখানে মূল্যহীন। হাওর অঞ্চল থেকে একজন লোক এসে বললেন, যে নদীর পাথর আমরা এত দিন উত্তোলন করেছি, আরও হয়তো ২০০ বছর এই নদী আমাদের জীবন বাঁচিয়ে রাখত, মেশিনযন্ত্র দিয়ে আমরা তা দুই বছরে সব শেষ করে দিচ্ছি।
ধরিত্রী আমার নয়, আমিই ধরিত্রীর; নদী তো আমার নয়, আমিই নদীর; এই পাহাড় ও বন আমার নয়, আমিই বনের—এই ছিল জীবনভাবনা আদিবাসী মানুষের। আজকের করপোরেট সমাজ ও নগদ বাজারে এই ভাবনা, এই মূল্যবোধ অর্থহীন। আদিবাসীদের কাছে বন ও অরণ্য ছিল মায়ের মতো, অরণ্য জননী। অরণ্য যদি জননী হয়, তাকে বিক্রি বা উজাড় করার তো প্রশ্নই আসে না। সেই বন থেকে মুনাফা করার চিন্তাও তো আদিবাসীদের ছিল না। জননীকে কি বিক্রি করা যায়? আর আজকের রাষ্ট্র, উন্নয়নধারা ও মানুষের কাছে বন হলো সম্পদ, এখানে জীবনের কোনো বিষয় নেই। এখানেই অসহায় আদিবাসী মানুষ, তাদের ভাবনা-চিন্তা আজ মূল্যহীন। প্রকৃতি যখন উজাড় করে আমাদের পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-সুরমা নদী দিয়েছে, আমরা কেন এসব নদী দখল করি? সিডর, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস হলে অনেকে বলেন, মানুষ এখনো প্রকৃতিকে জয় করতে পারেনি, প্রকৃতির কাছে মানুষ অসহায়। আর আমরা আদিবাসীরা বলি, প্রকৃতিকে জয় করার বা তাকে পরাস্ত করার কিছু নেই। মানুষ যেন প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করার চিন্তা ভুলে যায়, বরং প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানের মাধ্যমে উভয়ে যেন পরিপূরক হয়। একজন খাসি বৃদ্ধ বলেছিলেন, ‘বনে একটি বড় গাছ দেখলে আধুনিক মানুষ গাছের কাঠের মূল্য টাকা দিয়ে বিচার করে আর গাছ কেটে বিক্রির কথা চিন্তা করে।’ আর আদিবাসী মানুষের কাছে বৃক্ষ হলো দেবতা। শুধু মানুষের জন্য তার চিন্তা নয়, বনের পশুপাখি, কীটপতঙ্গের কথাও আদিবাসী মানুষ ভাবে, তাদের জন্য বৃক্ষ সংরক্ষণ প্রয়োজন। আদিবাসী মানুষের কাছে ভূমি, পাহাড় ও বনের সবকিছু পবিত্র। সেখানে তাদের পূর্বপুরুষের রক্ত মিশে আছে, তাদের সমাধিক্ষেত্র আছে।
বাঙালি প্রেমিক ভালোবেসে তার প্রেমিকাকে বলে, তুমি আমার। ‘তুমি আমার’ বলেই ছেলেটি মেয়েটির স্বাধীনতা হরণ করে। আদিবাসী জীবনদর্শনে ছেলেটি মেয়েটিকে ‘তুমি আমার’ না বলে বলবে, ‘আমি তোমার।’ বিষয়টি পুরো উল্টো।
গত ১৩ জানুয়ারি সিলেটের জাফলংয়ের কাছে মেঘালয়ের পাহাড় থেকে নেমে আসা সারী নদী দেখতে গেলাম। এই নদীর জল এখনো নীল। সঙ্গে ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। আমরা একটি নৌকায় করে যেখানে সারী নদী মেঘালয়ের খাসি পাহাড় থেকে নেমেছে, তার শেষ মাথায় গেলাম। ওপাশে বিএসএফ ক্যাম্প। হাবিবুর রহমান স্যার আমাকে বললেন, ‘এই নীল পানির ফটো তোলো।’ তিনি বললেন, ‘বহু দিন পর এই রকম নীল পানি দেখলাম।’ আমি ফটো তুললাম। সারী নদীর দুই ধার এখনো অপূর্ব সুন্দর। স্বচ্ছ, পরিষ্কার তার নীল জল। তবে শুনলাম, জাফলংয়ের পিয়াইন নদীর মতো এখানেও পাথর ও বালুলোভী মানুষের চোখ পড়েছে। যন্ত্রদানব ও ব্যবসায়ী লোভী মানুষের অত্যাচারে পিয়াইন নদী ও জাফলং এখন লন্ডভন্ড, মৃতপ্রায়। আমরা স্বস্তি পেলাম দেখে, সারী নদী এখনো বেঁচে আছে, সুন্দর আছে। তবে বিপদের কথাও জানলাম, এই নদীতেও বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আর এপারেও পাথর ও বালু ব্যবসায়ীরা মাঝেমধ্যে নদী খোঁড়ার চেষ্টা করছে। প্রথম আলো এ বিষয়ে ১৭ জানুয়ারি একটি খবর ছেপেছে।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বাপা আয়োজিত সম্মেলনে কয়েকজন শিক্ষক বললেন, ‘আদিবাসী মানুষের কাছে বনের দায়িত্ব দিলে তারাই বন, গাছ, জীববৈচিত্র্য ইত্যাদি রক্ষা করত। অন্যদের কাছে এই দায়িত্ব দিলে কী হয়, তা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি। অন্যের কাছে গাছ ও বন হলো মুনাফার হাতিয়ার, আর আদিবাসীদের কাছে বন ও অরণ্য হলো জীবনের প্রতীক।’
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় আমি একটি আদিবাসী ঘোষণাপত্রের উদ্ধৃতি দিয়েছিলাম, ‘সকল মানুষের আগমন ঘটেছে বন থেকে, ভূমি থেকে। বন মরে গেলে মানুষ মরে যায়। আমাদের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে বিশ্বের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করার, একে মায়া-মমতা দিয়ে লালন করার। যখন এ প্রকৃতির কোনো একটি অংশকে ধ্বংস করা হয়, তখন সব ভারসাম্য লন্ডভন্ড হয়ে যায়। যখন বনের শেষ বৃক্ষ কেটে ফেলা হয়, শেষ নদীটি শুকিয়ে যায়, তখন মানুষ শিখবে যে সোনা-রুপা-টাকা খেয়ে জীবন বাঁচে না। সঠিকভাবে, পরম যত্নে, নির্লোভভাবে প্রকৃতিকে, বন ও ভূমিকে ব্যবহার করার ভার আমরা পেয়েছি পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে, যারা ভবিষ্যর‌্যা প্রজন্মের জন্য একে রক্ষার ভার আমাদের দিয়ে গেছেন।’ বহুদিন ধরে আধুনিক সভ্যতা, ক্ষমতাধর লোভী নিষ্ঠুর মানুষ এবং অপরিণামদর্শী রাষ্ট্র কথাগুলো কানে শোনেনি। তাই আজ প্রকৃতি ও আদিবাসী মানুষ উভয়ে বিপন্ন।
এই অনুষ্ঠানেই বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেছেন, আদিবাসীদের সংজ্ঞায়ন নয়, শনাক্তকরণই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কথাটা আমাদের সরকার ও রাষ্ট্র যেন কানে শোনে ও মানে।


Partner site : online news / celebrities /  celebrity image
website design by Web School.
Partner site : online news / celebrities /  celebrity image
website design by Web School.
Partner site : online news / celebrities /  celebrity image
website design by Web School.
Read more

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কিছু চিন্তা

,

muhammad.jahangir's picture
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের হত্যাকাণ্ডের সূত্র ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ছাত্ররাজনীতি’ নিয়ে পত্রপত্রিকায় আবার আলোচনা শুরু হয়েছে। অনুমান করি, বিভিন্ন আড্ডায় ও পরিবারেও একই রকম আলোচনা চলছে। তবে এই আলোচনা বেশি দিন স্থায়ী হয় না। কিছুদিন পরই থেমে যায়। তখন পরিস্থিতি বা পরিবেশ সবই আগের অবস্থায় ফিরে আসে। নতুন আরেকটি ছাত্র খুন না হওয়া পর্যন্ত এই আলোচনা স্থগিত থাকে।
কিছুদিন ধরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। এ প্রসঙ্গে পত্রপত্রিকার বেশির ভাগ আলোচনাই ‘পরিস্থিতির বিবরণ’ বা মন্তব্যের নামে চর্বিতচর্বন বলে মনে হয়েছে।
প্রথমে একটা কথা মোটা দাগে বলতে চাই তা হলো, দেশের মেইন স্ট্রিম রাজনীতি যত দিন দূষিত ও দুর্বৃত্তায়িত থাকবে, তত দিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সুস্থ ও স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ আশা করা বৃথা। কারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকরাজনীতি দেশের মূলধারার রাজনীতির বাইপ্রডাক্ট। কাজেই মূলধারার রাজনীতি ঠিক না হলে বাইপ্রডাক্ট ঠিক হবে, এটা আশা করা বাতুলতা মাত্র।
মূলধারার রাজনীতি কবে সুস্থ হবে, কবে গণতান্ত্রিক হবে, তত দিন কি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বসে থাকবে? এ রকম খুনোখুনি চলতেই থাকবে? আবাসিক হলে ক্ষমতাসীন দলের (দুই প্রধান দল) সন্ত্রাস ও আধিপত্য চলতেই থাকবে? মূলধারার রাজনীতি কলুষিত রেখে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শান্তির’ লক্ষ্যে সরকার বড় কোনো পদক্ষেপ নেবে, এমনটা কেউ আশা করে না। তবু ক্ষীণ আশা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের দেশে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর বাণী নিয়ে যুবলীগের নেতাদের পাঠাচ্ছেন। তাই মনে আশা জাগে, তিনি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘শান্তি’ প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ হয়তো নেবেন।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, এ ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়ার জন্য বর্তমান সরকারে অনেক যোগ্য ব্যক্তি রয়েছেন। তদুপরি একজন মন্ত্রী ও একজন উপদেষ্টাও রয়েছেন। রয়েছেন বহু আওয়ামী সমর্থক কলামিস্ট ও বুদ্ধিজীবী। আমার সন্দেহ, তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে যথাযথ পরামর্শ দিচ্ছেন না বা দিলেও প্রধানমন্ত্রী তা শুনছেন না। আমার মতো অভাজনের কথা শুনবেন, তেমন ভরসা পাই না। তবু লিখছি, এই অসিলায় জনগণকে আমার চিন্তা জানানোর জন্য, যাতে এ ব্যাপারে জনমত তৈরি হয়।
গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। সামরিক শাসনামলে আরও বেশি ক্ষতি হয়েছিল। বর্তমানে ছাত্রলীগের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রশ্রয়ে কীভাবে দিনের পর দিন টেন্ডার ও অন্যান্য সন্ত্রাস চালাচ্ছেন, তার সচিত্র বিস্তারিত বিবরণ প্রায় প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হচ্ছে। এগুলো বিএনপি বা জামায়াতের অপপ্রচার নয়।
এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির উপায় কী? কয়েকটি প্রস্তাব—এক. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্ক থাকতে পারবে না। ছাত্ররা নিজেরা সংগঠন করবেন ও নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের কমিটি গঠন করবেন। অনির্বাচিত কোনো কমিটি ক্যাম্পাসে কাজ করতে পারবে না। দুই. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনের ভেতরে কোনো সভা বা মিছিল করা যাবে না। তিন. প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ আবাসিক হল ও কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের প্রত্যক্ষ নির্বাচন দিতে বাধ্য থাকবে। নির্বাচন হতে পারে দ্বিবার্ষিক। কোনো অজুহাতেই নির্বাচন বাদ দেওয়া যাবে না। চার. ছাত্রদের শিক্ষাসংশ্লিষ্ট আন্দোলনের পাশাপাশি প্রত্যেক ছাত্রসংসদ বছরে একবার শিক্ষা-সপ্তাহ, সাংস্কৃতিক সপ্তাহ, নাট্য-সপ্তাহ, ক্রীড়া-সপ্তাহ ও বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করতে বাধ্য থাকবে (শুধু নেতা হওয়ার জন্য ‘নির্বাচিত’ হলে চলবে না)। এসব ‘সপ্তাহ’ যাতে বাধ্যতামূলকভাবে পালিত হয়, কর্তৃপক্ষ তার একটা ক্যালেন্ডার তৈরি করে দেবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয়ভাবে ও প্রতিটি আবাসিক হল ছাত্রসংসদকে একটি ‘বার্ষিকী’ প্রকাশ করতে হবে। পাঁচ. আগ্রহী ছাত্ররা পাস করার পর রাজনৈতিক দলের যুব সংগঠনের মাধ্যমে মেইনস্ট্রিম রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারবেন। ছাত্রজীবনে যাতে জাতীয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত হতে না পারেন, তা দেখা সরকারের নীতিনির্ধারকদের দায়িত্ব। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইন, নীতিমালা ইত্যাদি তৈরি করতে হবে। আমি মনে করি, আগ্রহী তরুণেরা অন্তত পাঁচ বছর যুব সংগঠন (ছাত্রসংগঠন নয়) না করলে তাঁকে মূল রাজনৈতিক দলের সদস্যপদ দেওয়া উচিত নয়। মেইনস্ট্রিম রাজনীতি করার জন্য তার সারা জীবন পড়ে রয়েছে। ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত যুব সংগঠনে ‘ইন্টার্নি’ হিসেবে তাঁর কাজ করা উচিত। ছয়. বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনগুলো পর্যালোচনা ও যুগোপযোগী করার জন্য ‘ইউজিসি’ একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করতে পারে। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যাচ্ছে, কিছু কিছু আইন শিক্ষকদের মধ্যে দলাদলির সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তির সুযোগ করে দিয়েছে। গণতন্ত্রচর্চার নামে লেজুড়বৃত্তি ও দলাদলিই প্রাধান্য পেয়েছে। প্রকৃত গণতন্ত্রচর্চা হয়েছে সামান্য। অবশ্য এসব আইনে লাভ হয়েছে অনেক দলবাজ শিক্ষকের। যাঁদের পেছনের সারিতে থাকার কথা, তাঁদের অনেকে উপাচার্য, ডিন, সিন্ডিকেট ও সিনেট সদস্য হয়েছেন। ‘দলকানা’ হওয়ার নানা সুবিধা। বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু মধ্যম মানের শিক্ষক আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন। অতীতেও অনেকে ছিলেন। জ্ঞানী ও পণ্ডিত শিক্ষকেরা অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণে মতামত দেওয়ারও সুযোগ পান না। তাঁরা কোণঠাসা। সে জন্যই ‘বিশ্ববিদ্যালয় আইন’ সংশোধন ও পরিমার্জনা করার প্রস্তাব দিয়েছি। দেশের সংবিধান কয়েকবার পরিমার্জনা হয়ে গেছে কিন্তু ‘বিশ্ববিদ্যালয় আইনে’ হাত দেওয়ার সাহস কোনো সরকারের হয়নি। সাত. রাজনৈতিক দলের ক্যাডার শিক্ষকদের উপাচার্য ও সহ-উপাচার্য পদে নিয়োগ দেওয়ার বিধান বাদ দিতে হবে। এসব নিয়োগেই যত গোলমাল। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনটি ঘটেছে অতীতে।
পৃথিবীর অন্যান্য সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশে ক্যাডারদের কি উপাচার্য করা হয়? কেউ কি বলতে পারবেন অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ বা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানরা ওই দেশের কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থক? (‘কোন বনেগা ক্রোড়পতি’তে এ প্রশ্নটি অনায়াসে দেওয়া যেত।)। আট. বর্তমান আইনে উপাচার্য নিয়োগের জন্য একটি প্যানেল নির্বাচনের বিধান রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু বছর যাবর‌্যা তা আর অনুসরণ করা হচ্ছে না। কোনো শিক্ষামন্ত্রী এ প্রশ্নটি তোলেননি। বিনা নির্বাচনে কি এমপি হওয়া যাবে? যাবে না। কিন্তু উপাচার্য হওয়া যায়। ক্যাডার শিক্ষকের অনেক ক্ষমতা। আইনকে তাঁরা বুড়ো আঙুল দেখাতে পারেন। দেশের নানা অনাচার নিয়ে শিক্ষকেরা প্রায়ই কথা বলেন। কিন্তু নিজেদের উপাচার্য কীভাবে নিযুক্ত হলেন, ছাত্রসংসদের কেন নির্বাচন হচ্ছে না, এসব প্রশ্ন তাঁরা তোলেন না। ব্যতিক্রম খুব কম। প্যানেলের মাধ্যমে উপাচার্য নির্বাচনের যে বিধান রয়েছে, তা-ও ত্রুটিপূর্ণ। এটা আপাত সেমি গণতান্ত্রিক মনে হলেও এই প্যানেলের মাধ্যমেও সরকারের পছন্দসই ব্যক্তিই উপাচার্য হতে পারেন। কে কত দলবাজ ও অনুগত, সেটাই বিবেচনা করা হয়। এটা কোনো উপাচার্যের যোগ্যতা হতে পারে না, কিন্তু বাংলাদেশে তা-ই হচ্ছে।
নয়. পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য নিয়োগের পদ্ধতি নিয়ে অনেক আলোচনা ও বিতর্ক করা দরকার। এই পদের নিয়োগ থেকেই যত অশান্তির সূচনা। এ ব্যাপারে এমন একটি পদ্ধতি বের করতে হবে, যাতে কোনো শিক্ষক-ক্যাডার এই নিয়োগ না পান, উপাচার্য যেন কোনোভাবেই দলকানা না হন, তিনি যেন সরকার, মন্ত্রী বা ক্ষমতাসীন দলের লেজুড়বৃত্তি করতে না পারেন। উপাচার্য তাঁর প্রশাসন চালাবেন আইন ও নীতি অনুযায়ী। আইন প্রয়োগে তিনি যেন অন্ধ হন। ১০. পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার পদে নিয়োগে এখন যা হচ্ছে তা কোনো সভ্য দেশে কল্পনাও করা যায় না। বলা হয়, ‘লেকচারার নয়, ভোটার নিয়োগ দেওয়া হয়।’ অন্যান্য পদেও নিয়োগ নিয়ে স্বচ্ছতার অভাব দেখা যায়। তাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এন্ট্রি পয়েন্টে নিয়োগবিধি পুনর্বিন্যাস করতে হবে। ১১. সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে কোনো ছাত্র দোষী প্রমাণিত হলে তাকে শুধু বহিষ্কার নয়, অনেক বড়মাপের শাস্তি দেওয়ার বিধান থাকতে হবে (জাহাঙ্গীরনগরে জুবায়ের হত্যায় যারা দোষী প্রমাণিত হবে, তারা শাস্তি পেয়েছে সেটাই আমরা দেখতে চাই)। সন্ত্রাসীদের সহযোগীদেরও উপযুক্ত শাস্তির বিধান থাকতে হবে। কোনো ছাত্র ‘সন্ত্রাসী’ দোষী প্রমাণিত হওয়ার পরও গুরু দণ্ড না পেলে বুঝতে হবে, সরকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অরাজকতা বজায় রাখতে চায়। কোনো প্রতিষ্ঠানের সন্ত্রাসী গুরু দণ্ড না পেলে সেই প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস দূর হতে পারে না। দুঃখের ও ক্ষোভের বিষয়, গত কুড়ি বছরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে খুন ও নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য বড় দুই দলের আমলে কেউ-ই তেমন বড়মাপের শাস্তি পায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার কোনো বড় শাস্তি নয়। বহিষ্কার করার অর্থ ওই ছাত্রকে রক্ষা করা। এসব ভোজবাজি যেন আর করা না হয়। এমন শাস্তি দিতে হবে যাতে সে জীবনে আর বড় কোনো অন্যায় করতে না পারে। মনে রাখবেন, সে একজন ছাত্রকে খুন করে এসেছে। খুন। শুধু এটা মনে রাখলেই হবে। খুন হওয়া ছাত্রটিরও একটি সুন্দর ভবিষ্যর‌্যা ছিল।
১২. এ দেশের দুর্ভাগ্য, দেশের দূষিত রাজনীতির শিকার হয়েছেন কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার নির্দোষ ছাত্রছাত্রী। এসব ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক আনন্দ থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন। সন্ত্রাসী ছাত্রদের হাতে খুন হয়েছেন অনেক নিরীহ ছাত্র। আবার একই দলের সন্ত্রাসীর হাতে দলের অপর সন্ত্রাসীও খুন হয়েছে বখরা নিয়ে মতবিরোধে। ১৩. দেশের মেইনস্ট্রিম রাজনীতি কবে ও কীভাবে সুস্থ হবে, তা আমরা জানি না বা আদৌ এ দেশের রাজনীতি কখনো সুস্থ হবে কি না, তা-ও জানি না। তবে বর্তমান সরকার চেষ্টা করলে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পারে। সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পরিবর্তন করতে হবে। ‘ছাত্ররাজনীতি’ সম্পর্কে আমাদের দীর্ঘদিনের লালিত দৃষ্টিভঙ্গিরও কিছুটা পরিবর্তন করতে হবে। এ রকম নানা কিছুর সম্মিলন ঘটাতে পারলে আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নত হবে। ফিরে আসবে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ। শুধু বক্তৃতা দিয়ে এই পরিবর্তন সম্ভব হবে না।
১৪. আমাদের সামনে এখন দুটি চয়েস—ক. আমরা কি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক মাস পর পর নিরীহ ছাত্রের করুণ মৃত্যু, টেন্ডারসন্ত্রাস, আবাসিক হল দখল, রাজনৈতিক সন্ত্রাস ইত্যাদি দেখতে থাকব? খ. নাকি নানা আইন পরিবর্তন করে ও নতুন কিছু আইন তৈরি করে এবং তা প্রয়োগ করে ধীরে ধীরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ শিক্ষাবান্ধব করে তুলব?
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জুবায়েরের লাশ সামনে রেখে আসুন, আমরা এই আলোচনা শুরু করি।

Partner site : online news / celebrities /  celebrity image
website design by Web School.
Read more

মাথার অসুখের স্বরূপ ও চিকিত্সা

,

Muhammad.yahya.Akhtar
শিক্ষাঙ্গনের সুস্থতা ও স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভর করে কোন দেশের সার্বিক অগ্রগতি। কারণ, প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে উন্নয়ন অর্জনের লক্ষ্যে যোগ্য ও মেধাবী নাগরিক তৈরির বিকল্প নেই। একটি পরিকল্পিত, প্রগতিশীল শিক্ষাঙ্গন সৃষ্টি না করে যে এ পথে এগুনো যায় না সে বিষয়টি উন্নয়নকামী দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব জানলেও সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থের উর্ধ্বে উঠতে না পারায় এরা এক্ষেত্রে ভাল করতে পারে না। বাংলাদেশ এরকম উন্নয়নকামী দেশগুলোর কাতারভুক্ত একটি দেশ। দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষা খাতের উন্নয়ন সবচেয়ে বেশি জরুরি। কারণ, অন্যসব ক্ষেত্রে কর্মরত নাগরিকরা শিক্ষা খাতের মধ্যদিয়ে যোগ্যতা অর্জন করে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেন। এসব শিক্ষিত নাগরিক জীবনের প্রায় দেড়যুগ শিক্ষাঙ্গনে ব্যয় করার পর কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। এ দীর্ঘ সময়ব্যাপী তারা শিক্ষাঙ্গনে যা শিখেন,তাদের কর্মজীবনে তার জোরালো প্রভাব পড়ে। একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষাজীবনে যদি শৃংখলা, নিয়মানুবর্তিতা, পরমতসহিষ্ণুতা, পেশাদারিত্ব, নিজ একাডেমিক ডিসিপ্লিনে অবদানমূলক কিছু করা প্রভৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন তাহলে পরবর্তী কর্মজীবনেও তিনি এসব চর্চায় উদ্বুদ্ধ হন। পাশ্চাত্যের শিল্পোন্নত দেশগুলোর শিক্ষাঙ্গনের দিকে তাকালে এমনই দেখা যায়।
বাংলাদেশে শিক্ষাঙ্গনের অবস্থা ভিন্ন। এখানে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় লেখাপড়ার মান ক্রমান্বয়ে কমে আসছে, বাড়ছে শিক্ষাকেন্দি ক কোচিং ও বেসরকারি পর্যায়ের শিক্ষা-বাণিজ্য। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি একাডেমিক চর্চা ম্লান করে এর রাজনৈতিক ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে তুলছে। হাতেগোনা দু’য়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বাদ দিলে অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আকর্ষণীয় কোর্স পড়ে ব্রিলিয়ান্ট ফলাফল করে যেসব গ্রাজুয়েট বের হচ্ছেন তারা আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারে অন্য দেশের গ্রাজুয়েটদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না। বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেসব ছাত্রছাত্রী বের হচ্ছেন তারা শিক্ষাঙ্গন থেকে শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা, পরমতসহিষ্ণুতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ আর জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার সঙ্গে যতটা পরিচিত হচ্ছেন, তার চেয়ে বেশি পরিচিত হচ্ছেন দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি, হল দখল, সিট দখল, ভর্তি বাণিজ্য, সেশনজট, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার, ছাত্রহত্যা, অর্থের মাধ্যমে ছাত্রত্ব ক্রয়-বিক্রয়, অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি প্রভৃতি বিষয়গুলোর সঙ্গে। ফলে ছাত্ররা শিক্ষাঙ্গনে যে নৈরাজ্যিক পরিবেশে বেড়ে উঠছেন, কর্মজীবনেও সে নৈরাজ্যকে বয়ে নিয়ে লালন ও চর্চা করছেন। এরফলে শিক্ষাঙ্গনের নৈরাজের প্রভাবে সারাদেশে নৈরাজ্য বিস্তারিত হচ্ছে।
ছাত্র রাজনীতির পক্ষে-বিপক্ষে তর্ক না করে বলা যায়, আজকের ছাত্র রাজনীতি আর ছাত্রদের স্বার্থকেন্দি ক রাজনীতি নেই। ছাত্ররা এখন তাদের একাডেমিক স্বার্থের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করার পরিবর্তে জাতীয় দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পর ২১ বছরে ছাত্রদেরকে কোন জাতীয় ইস্যু বা বড় ধরনের একাডেমিক স্বার্থকেন্দি ক আন্দোলন করতে দেখা যায়নি। কিন্তু এ দীর্ঘ সময়ে তারা হল দখল, সিট দখল, আধিপত্য বিস্তার, রাজপথে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভর্তি বাণিজ্যসহ নানারকম নেতিবাচক ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়েছেন। শিক্ষাঙ্গনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হলে বড় ছাত্র সংগঠনগুলো সে শিক্ষানীতির ব্যাপারেও সেমিনার-ওয়ার্কশপ করার বা সে বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবার সময় পাননি। ছাত্র সংগঠনগুলোকে নতুন আরপিওতে রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠনের পরিবর্তে সহযোগী সংগঠন বলা হলেও বাস্তবে এগুলো অঙ্গ সংগঠনের মতই ভূমিকা পালন করছে। ঐতিহ্যবাহী ছাত্র রাজনীতি থেকে ত্যাগের মহান বৈশিষ্ট্যকে যাদুঘরে পাঠিয়ে ছাত্রনেতারা এখন যেন এ রাজনীতিকে ভোগের এবং উপার্জনের সুযোগ হিসাবে ব্যবহার করছেন। সাধারণ মানুষের বিপদাপদে পাশে দাঁড়াবার সনাতনী প্রবণতা ভুলে গিয়ে ছাত্রনেতারা ব্যবসা-বাণিজ্য, চাঁদা-টেন্ডারসহ বড় বড় কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ষাট-সত্তরের দশকেও জাতীয় দুর্যোগে বা মানুষের সুখে-দুঃখে ছাত্ররা মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদেরকে সাহায্য করতেন। কিন্তু এখনকার ছাত্রনেতাদের সে সময় কই? তারা এখন অনেক ব্যস্ত। ২০১১-২০১২ সালের শৈত্যপ্রবাহে উত্তর বাংলাদেশের অনেক গরীব মানুষ শীতের কষ্টে মারা গেলেও ছাত্রসমাজ বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুরোনো কাপড় সংগ্রহ করে গরীবদের মাঝে বিতরণের মত কাজ করার সময় পাননি। এরকম জনসেবামূলক কাজে ছাত্রসমাজের আগ্রহ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে নেতিবাচক ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে বর্ণাবরণে পরিচালিত শিক্ষক রাজনীতি যুক্ত হয়ে একে আরও ক্ষতিকর করে তুলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র এবং শিক্ষকরা যে রাজনীতি করছেন তা পৃথকভাবে না হয়ে প্রচ্ছন্নভাবে মিলেমিশে যাওয়ায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এর ফলে শিক্ষকদের নিরপেক্ষতার মহান অহঙ্কার ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়ছে। ছাত্র-শিক্ষকরা তাদের প্রধান একাডেমিক পরিচয়ের চেয়ে অনেকক্ষেত্রেই রাজনৈতিক পরিচয়ে পরিচিত হচ্ছেন। এটা খুবই খারাপ লক্ষণ। ছাত্র নিহত হলে তার একাডেমিক পরিচিতিকে ধামাচাপা দিয়ে গণমাধ্যমে ‘অমুক ছাত্র সংগঠনের কর্মী বা নেতা’ হিসাবে তার রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর সম্মানিত শিক্ষক-ছাত্রদের কর্মকাণ্ড দেখে উপলব্ধি করা কষ্টকর হয়ে উঠেছে যে বিশ্ববিদ্যালয় কি একটি একাডেমিক প্রতিষ্ঠান, নাকি এটি কোন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় ও এর ছাত্র-শিক্ষকদের একাডেমিক কর্মকাণ্ডের চেয়ে এর/এদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডই অধিক প্রচার পাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগেও দলীয় রাজনীতির তীব্র প্রভাব পড়েছে। ক্ষমতাসীন দলের আদর্শে বিশ্বাসী ও নিবেদিতপ্রাণ না হলে আকর্ষণীয় ফলাফলধারী এবং বিরল মেধার অধিকারী হয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পাওয়া যাচ্ছে না। দলীয় আদর্শে নিবেদিতপ্রাণরা কম যোগ্যতা নিয়ে দলীয় সবুজ সঙ্কেতে শিক্ষকতায় আসছেন। ফলে কি শিক্ষকতায় বা কি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কর্মকাণ্ডে, একনিষ্ঠ একাডেমিকরা কোণঠাসা হয়ে বর্ণধারী-দলবাজরা প্রাধান্য পাচ্ছেন। শিক্ষক নিয়োগের সময় রাজনৈতিক ভোটের অঙ্ক প্রাধান্য পাচ্ছে এবং নিয়োগদাতারা চাইছেন যাকে নিয়োগ দেয়া হবে তার ফলাফল সবচেয়ে ভাল হোক বা না হোক, তিনি শিক্ষক হিসাবে ভাল হোন বা না হোন, তাকে অবশ্যই বিশেষ দলীয় আদর্শে বিশ্বাসী হতে হবে। এজন্য নিয়োগের আগে অনানুষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী ম্যাগনিফায়িং গ্লাস দিয়ে প্রার্থীদের রং যাচাই করা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। আবার নিয়োগ পাবার পর ওই শিক্ষক যেন বর্ণত্যাগ বা দলীয় আদর্শচ্যুত না হন সে ব্যাপারেও নজরদারি করা হচ্ছে। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে নবনিযুক্ত প্রভাষকদের ভোটের আগে চায়ের দাওয়াত দিয়ে রাজনৈতিক সবক দেয়া হচ্ছে। এ কারণে ‘শত ফুল ফুটতে দাও’ নীতিতে বিশ্বাসী ও মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী কিছু স্বাধীনচেতা নবীন শিক্ষকের হূদয়ে রক্তক্ষরণ ও মস্তিষ্কে পেশা পরিবর্তন চিন্তা চলছে। এহেন দলীয় নজরদারিতে নবীন শিক্ষকদের যুগপত্ মানসিক শান্তি ও একাডেমিক চর্চা বিঘ্নিত হচ্ছে। বড় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ১৯৭৩ সালের যে বিশ্ববিদ্যালয় আইন/অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে তা অকার্যকর হয়ে পড়ার পরও ওই অধ্যাদেশ/আইনকে যুগোপযোগী করার কোন উদ্যোগ না নেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম ভেঙ্গে পড়েছে। এ অধ্যাদেশ/আইন শিক্ষকদেরকে অবারিত স্বাধীনতা দিলেও তাদের দায়িত্বশীলতা সুনিশ্চিত করতে পারেনি। এ অধ্যাদেশের রূপকারদের অন্যতম ড. কামাল হোসেন, প্রফেসর খান সরোয়ার মুর্শেদ প্রভৃতি ব্যক্তিত্ব এর অকার্যকারিতা স্বীকার করা সত্ত্বেও সরকার রহস্যজনক কারণে এ আইন/অধ্যাদেশকে যুগোপযোগী করার পরিবর্তে একে আসমানি কিতাবের মত সংশোধন-অযোগ্য মনে করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় হল একটি দেশের মস্তিষ্ক। এখানে হয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের স্বাধীন চর্চা। বিশ্ববিদ্যালয় জাতিকে উপহার দেয় সুশিক্ষিত নাগরিক আর প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত অধ্যাপকরা অনুরুদ্ধ হয়ে সরকারকে দেশের উন্নয়নে সহায়তা করেন। বিশ্বব্যাপী সরকারের বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের জন্য প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে যাওয়ার রেওয়াজ থাকলেও বাংলাদেশে এ ধারা বিপরীত। এখানে সরকারের কষ্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে যাওয়া লাগে না। পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত অধ্যাপকরাই ভিসি-প্রোভিসি ও বিভিন্ন পদে যাওয়ার জন্য সরকারের কাছে দৌড়-ঝাঁপ করেন। আর সরকারের দ্বিমুখী নীতির কারণে এ দৌড় প্রতিযোগিতায় দলীয় অনুগতরাই প্রাধান্য পান। এরফলে একদিকে স্বাধীনচেতা গবেষক ও নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকরা যেমন কোণঠাসা হয়ে পড়েন, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-প্রোভিসি পদে ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভিসি নিয়োগ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। সরকারের দ্বিমুখী নীতি বলতে যা বুঝায় তা হল সরকার সবসময় মুখে বলে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দলীয় রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া উচিত নয়, কিন্তু বাস্তবে যখন ডেপুটেশনে কোন বড় পদে কাউকে দায়িত্ব দেয়, তখন ভাল করে যাচাই-বাছাই করে নিজ দলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বর্ণধারী অধ্যাপক ছাড়া অন্য কোন নিরপেক্ষ একাডেমিককে সে দায়িত্ব দেয় না। সরকারের এ দ্বিমুখী নীতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ণের আবরণে দলীয় রাজনীতি চর্চা উত্সাহ পায়।
উচ্চ শিক্ষাঙ্গন আজ অসুস্থ। এ অসুস্থতার কোন চিকিত্সার উদ্যোগ নেই। নেই কোন আলাপ-আলোচনা। কেবলমাত্র কিছুদিন পর পর ক্যাম্পাসে রক্ত ঝরলে বা লাশ পড়লে শিক্ষাঙ্গনের অসুস্থতা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়, তারপর আবার তা স্তিমিত হয়ে যায়। তারপর লাশ পড়লে আবার হয় আলোচনা, কিন্তু জাতির মস্তিষ্ক, সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের চিকিত্সার উদ্যোগ নেয়া হয় না। বুয়েটে সনির লাশ পড়লে জাতি বিচলিত হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবু বকর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শরীফুজ্জামান নোমানী, ফারুক হোসেন, নাসরুল্লাহ নাসিম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মহিউদ্দিন মাসুম, হারুন অর রশীদ, আসাদুজ্জামান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জুবায়ের আহমেদ লাশ হলে প্রতিবারই বিশ্ববিদ্যালয়ের অসুস্থতা নিয়ে সুশীল সমাজে আলোচনা উঠলেও সরকারি উদ্যোগের অভাবে তা স্তিমিত হয়ে যায়। এভাবে শিক্ষাঙ্গনের এ নৈরাজ্য আজ এক দীর্ঘমেয়াদি অসুখে পরিণত হয়েছে। জাতির মস্তিষ্কের এ দীর্ঘমেয়াদি অসুখের স্থায়ী চিকিত্সা প্রয়োজন। কিন্তু সরকারের তেমন কোন পরিকল্পনা আছে বলে মনে হয় না। এ পরিসরে এ চিকিত্সার প্রেসক্রিপশন দেয়া যাবে না। তবে একটি অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের মাধ্যমে এ দীর্ঘমেয়াদি অসুখের চিকিত্সার সূচনা করার কথা ভাবা যায়। এ ওষুধটির নাম ‘নির্বাচন’। শিক্ষাঙ্গনে নির্বাচনের নিয়মিত চর্চার সূচনা করলে চলমান নৈরাজ্য অনেকটাই দূর হতে পারে। নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে ছাত্রনেতারা নেতৃত্বে আসার জন্য তাদের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরির লক্ষ্যে সব সংগঠনের ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে ভাল ব্যবহার করে তাদের মন জয়ে সচেষ্ট হবেন। চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি থেকে সরে এসে ভাল কাজের মধ্যদিয়ে সবার সমর্থন অর্জনের চেষ্টা করবেন। শিক্ষকদের মধ্য থেকে নিয়মমাফিক নির্বাচনের মাধ্যমে ভিসি নিয়োগের চর্চা শুরু করলে এক্ষেত্রেও উন্নতি হবে। দলীয় স্তাবক ও নতজানুদের পরিবর্তে তখন সুযোগ্য একাডেমিকদেরকে সাধারণ শিক্ষকরা ভিসি হবার সুযোগ করে দেবেন। প্রশ্ন হল, কঠিন না হলেও নির্বাচন করার এ কাজটির সূচনা হয় না কেন? এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা ইভিএম-এর জটিলতা নেই, কাজেই সরকার চাইলেই কি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সূচনা হতে পারে না? নিশ্চয়ই পারে। তবে সরকার হয়তো এসব ক্ষেত্রে দলীয় জয়-পরাজয়ের অঙ্ক করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। আর সেজন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন দিতে সরকারের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। আর এ কারণে জাতির মস্তিষ্ক হিসাবে বিবেচিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হানাহানি, নৈরাজ্য আর দলবাজি হ্রাস না পেয়ে কিছুদিন পর পর লাশ পড়ছে।
শিক্ষাঙ্গনের সুস্থতা ও স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভর করে কোন দেশের সার্বিক অগ্রগতি। কারণ, প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে উন্নয়ন অর্জনের লক্ষ্যে যোগ্য ও মেধাবী নাগরিক তৈরির বিকল্প নেই। একটি পরিকল্পিত, প্রগতিশীল শিক্ষাঙ্গন সৃষ্টি না করে যে এ পথে এগুনো যায় না সে বিষয়টি উন্নয়নকামী দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব জানলেও সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থের উর্ধ্বে উঠতে না পারায় এরা এক্ষেত্রে ভাল করতে পারে না। বাংলাদেশ এরকম উন্নয়নকামী দেশগুলোর কাতারভুক্ত একটি দেশ। দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষা খাতের উন্নয়ন সবচেয়ে বেশি জরুরি। কারণ, অন্যসব ক্ষেত্রে কর্মরত নাগরিকরা শিক্ষা খাতের মধ্যদিয়ে যোগ্যতা অর্জন করে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেন। এসব শিক্ষিত নাগরিক জীবনের প্রায় দেড়যুগ শিক্ষাঙ্গনে ব্যয় করার পর কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। এ দীর্ঘ সময়ব্যাপী তারা শিক্ষাঙ্গনে যা শিখেন,তাদের কর্মজীবনে তার জোরালো প্রভাব পড়ে। একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষাজীবনে যদি শৃংখলা, নিয়মানুবর্তিতা, পরমতসহিষ্ণুতা, পেশাদারিত্ব, নিজ একাডেমিক ডিসিপ্লিনে অবদানমূলক কিছু করা প্রভৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন তাহলে পরবর্তী কর্মজীবনেও তিনি এসব চর্চায় উদ্বুদ্ধ হন। পাশ্চাত্যের শিল্পোন্নত দেশগুলোর শিক্ষাঙ্গনের দিকে তাকালে এমনই দেখা যায়।
বাংলাদেশে শিক্ষাঙ্গনের অবস্থা ভিন্ন। এখানে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় লেখাপড়ার মান ক্রমান্বয়ে কমে আসছে, বাড়ছে শিক্ষাকেন্দি ক কোচিং ও বেসরকারি পর্যায়ের শিক্ষা-বাণিজ্য। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি একাডেমিক চর্চা ম্লান করে এর রাজনৈতিক ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে তুলছে। হাতেগোনা দু’য়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বাদ দিলে অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আকর্ষণীয় কোর্স পড়ে ব্রিলিয়ান্ট ফলাফল করে যেসব গ্রাজুয়েট বের হচ্ছেন তারা আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারে অন্য দেশের গ্রাজুয়েটদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না। বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেসব ছাত্রছাত্রী বের হচ্ছেন তারা শিক্ষাঙ্গন থেকে শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা, পরমতসহিষ্ণুতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ আর জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার সঙ্গে যতটা পরিচিত হচ্ছেন, তার চেয়ে বেশি পরিচিত হচ্ছেন দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি, হল দখল, সিট দখল, ভর্তি বাণিজ্য, সেশনজট, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার, ছাত্রহত্যা, অর্থের মাধ্যমে ছাত্রত্ব ক্রয়-বিক্রয়, অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি প্রভৃতি বিষয়গুলোর সঙ্গে। ফলে ছাত্ররা শিক্ষাঙ্গনে যে নৈরাজ্যিক পরিবেশে বেড়ে উঠছেন, কর্মজীবনেও সে নৈরাজ্যকে বয়ে নিয়ে লালন ও চর্চা করছেন। এরফলে শিক্ষাঙ্গনের নৈরাজের প্রভাবে সারাদেশে নৈরাজ্য বিস্তারিত হচ্ছে।
ছাত্র রাজনীতির পক্ষে-বিপক্ষে তর্ক না করে বলা যায়, আজকের ছাত্র রাজনীতি আর ছাত্রদের স্বার্থকেন্দি ক রাজনীতি নেই। ছাত্ররা এখন তাদের একাডেমিক স্বার্থের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করার পরিবর্তে জাতীয় দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পর ২১ বছরে ছাত্রদেরকে কোন জাতীয় ইস্যু বা বড় ধরনের একাডেমিক স্বার্থকেন্দি ক আন্দোলন করতে দেখা যায়নি। কিন্তু এ দীর্ঘ সময়ে তারা হল দখল, সিট দখল, আধিপত্য বিস্তার, রাজপথে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভর্তি বাণিজ্যসহ নানারকম নেতিবাচক ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়েছেন। শিক্ষাঙ্গনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হলে বড় ছাত্র সংগঠনগুলো সে শিক্ষানীতির ব্যাপারেও সেমিনার-ওয়ার্কশপ করার বা সে বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবার সময় পাননি। ছাত্র সংগঠনগুলোকে নতুন আরপিওতে রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠনের পরিবর্তে সহযোগী সংগঠন বলা হলেও বাস্তবে এগুলো অঙ্গ সংগঠনের মতই ভূমিকা পালন করছে। ঐতিহ্যবাহী ছাত্র রাজনীতি থেকে ত্যাগের মহান বৈশিষ্ট্যকে যাদুঘরে পাঠিয়ে ছাত্রনেতারা এখন যেন এ রাজনীতিকে ভোগের এবং উপার্জনের সুযোগ হিসাবে ব্যবহার করছেন। সাধারণ মানুষের বিপদাপদে পাশে দাঁড়াবার সনাতনী প্রবণতা ভুলে গিয়ে ছাত্রনেতারা ব্যবসা-বাণিজ্য, চাঁদা-টেন্ডারসহ বড় বড় কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ষাট-সত্তরের দশকেও জাতীয় দুর্যোগে বা মানুষের সুখে-দুঃখে ছাত্ররা মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদেরকে সাহায্য করতেন। কিন্তু এখনকার ছাত্রনেতাদের সে সময় কই? তারা এখন অনেক ব্যস্ত। ২০১১-২০১২ সালের শৈত্যপ্রবাহে উত্তর বাংলাদেশের অনেক গরীব মানুষ শীতের কষ্টে মারা গেলেও ছাত্রসমাজ বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুরোনো কাপড় সংগ্রহ করে গরীবদের মাঝে বিতরণের মত কাজ করার সময় পাননি। এরকম জনসেবামূলক কাজে ছাত্রসমাজের আগ্রহ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে নেতিবাচক ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে বর্ণাবরণে পরিচালিত শিক্ষক রাজনীতি যুক্ত হয়ে একে আরও ক্ষতিকর করে তুলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র এবং শিক্ষকরা যে রাজনীতি করছেন তা পৃথকভাবে না হয়ে প্রচ্ছন্নভাবে মিলেমিশে যাওয়ায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এর ফলে শিক্ষকদের নিরপেক্ষতার মহান অহঙ্কার ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়ছে। ছাত্র-শিক্ষকরা তাদের প্রধান একাডেমিক পরিচয়ের চেয়ে অনেকক্ষেত্রেই রাজনৈতিক পরিচয়ে পরিচিত হচ্ছেন। এটা খুবই খারাপ লক্ষণ। ছাত্র নিহত হলে তার একাডেমিক পরিচিতিকে ধামাচাপা দিয়ে গণমাধ্যমে ‘অমুক ছাত্র সংগঠনের কর্মী বা নেতা’ হিসাবে তার রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর সম্মানিত শিক্ষক-ছাত্রদের কর্মকাণ্ড দেখে উপলব্ধি করা কষ্টকর হয়ে উঠেছে যে বিশ্ববিদ্যালয় কি একটি একাডেমিক প্রতিষ্ঠান, নাকি এটি কোন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় ও এর ছাত্র-শিক্ষকদের একাডেমিক কর্মকাণ্ডের চেয়ে এর/এদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডই অধিক প্রচার পাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগেও দলীয় রাজনীতির তীব্র প্রভাব পড়েছে। ক্ষমতাসীন দলের আদর্শে বিশ্বাসী ও নিবেদিতপ্রাণ না হলে আকর্ষণীয় ফলাফলধারী এবং বিরল মেধার অধিকারী হয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পাওয়া যাচ্ছে না। দলীয় আদর্শে নিবেদিতপ্রাণরা কম যোগ্যতা নিয়ে দলীয় সবুজ সঙ্কেতে শিক্ষকতায় আসছেন। ফলে কি শিক্ষকতায় বা কি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কর্মকাণ্ডে, একনিষ্ঠ একাডেমিকরা কোণঠাসা হয়ে বর্ণধারী-দলবাজরা প্রাধান্য পাচ্ছেন। শিক্ষক নিয়োগের সময় রাজনৈতিক ভোটের অঙ্ক প্রাধান্য পাচ্ছে এবং নিয়োগদাতারা চাইছেন যাকে নিয়োগ দেয়া হবে তার ফলাফল সবচেয়ে ভাল হোক বা না হোক, তিনি শিক্ষক হিসাবে ভাল হোন বা না হোন, তাকে অবশ্যই বিশেষ দলীয় আদর্শে বিশ্বাসী হতে হবে। এজন্য নিয়োগের আগে অনানুষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী ম্যাগনিফায়িং গ্লাস দিয়ে প্রার্থীদের রং যাচাই করা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। আবার নিয়োগ পাবার পর ওই শিক্ষক যেন বর্ণত্যাগ বা দলীয় আদর্শচ্যুত না হন সে ব্যাপারেও নজরদারি করা হচ্ছে। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে নবনিযুক্ত প্রভাষকদের ভোটের আগে চায়ের দাওয়াত দিয়ে রাজনৈতিক সবক দেয়া হচ্ছে। এ কারণে ‘শত ফুল ফুটতে দাও’ নীতিতে বিশ্বাসী ও মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী কিছু স্বাধীনচেতা নবীন শিক্ষকের হূদয়ে রক্তক্ষরণ ও মস্তিষ্কে পেশা পরিবর্তন চিন্তা চলছে। এহেন দলীয় নজরদারিতে নবীন শিক্ষকদের যুগপত্ মানসিক শান্তি ও একাডেমিক চর্চা বিঘ্নিত হচ্ছে। বড় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ১৯৭৩ সালের যে বিশ্ববিদ্যালয় আইন/অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে তা অকার্যকর হয়ে পড়ার পরও ওই অধ্যাদেশ/আইনকে যুগোপযোগী করার কোন উদ্যোগ না নেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম ভেঙ্গে পড়েছে। এ অধ্যাদেশ/আইন শিক্ষকদেরকে অবারিত স্বাধীনতা দিলেও তাদের দায়িত্বশীলতা সুনিশ্চিত করতে পারেনি। এ অধ্যাদেশের রূপকারদের অন্যতম ড. কামাল হোসেন, প্রফেসর খান সরোয়ার মুর্শেদ প্রভৃতি ব্যক্তিত্ব এর অকার্যকারিতা স্বীকার করা সত্ত্বেও সরকার রহস্যজনক কারণে এ আইন/অধ্যাদেশকে যুগোপযোগী করার পরিবর্তে একে আসমানি কিতাবের মত সংশোধন-অযোগ্য মনে করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় হল একটি দেশের মস্তিষ্ক। এখানে হয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের স্বাধীন চর্চা। বিশ্ববিদ্যালয় জাতিকে উপহার দেয় সুশিক্ষিত নাগরিক আর প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত অধ্যাপকরা অনুরুদ্ধ হয়ে সরকারকে দেশের উন্নয়নে সহায়তা করেন। বিশ্বব্যাপী সরকারের বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের জন্য প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে যাওয়ার রেওয়াজ থাকলেও বাংলাদেশে এ ধারা বিপরীত। এখানে সরকারের কষ্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে যাওয়া লাগে না। পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত অধ্যাপকরাই ভিসি-প্রোভিসি ও বিভিন্ন পদে যাওয়ার জন্য সরকারের কাছে দৌড়-ঝাঁপ করেন। আর সরকারের দ্বিমুখী নীতির কারণে এ দৌড় প্রতিযোগিতায় দলীয় অনুগতরাই প্রাধান্য পান। এরফলে একদিকে স্বাধীনচেতা গবেষক ও নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকরা যেমন কোণঠাসা হয়ে পড়েন, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-প্রোভিসি পদে ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভিসি নিয়োগ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। সরকারের দ্বিমুখী নীতি বলতে যা বুঝায় তা হল সরকার সবসময় মুখে বলে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দলীয় রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া উচিত নয়, কিন্তু বাস্তবে যখন ডেপুটেশনে কোন বড় পদে কাউকে দায়িত্ব দেয়, তখন ভাল করে যাচাই-বাছাই করে নিজ দলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বর্ণধারী অধ্যাপক ছাড়া অন্য কোন নিরপেক্ষ একাডেমিককে সে দায়িত্ব দেয় না। সরকারের এ দ্বিমুখী নীতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ণের আবরণে দলীয় রাজনীতি চর্চা উত্সাহ পায়।
উচ্চ শিক্ষাঙ্গন আজ অসুস্থ। এ অসুস্থতার কোন চিকিত্সার উদ্যোগ নেই। নেই কোন আলাপ-আলোচনা। কেবলমাত্র কিছুদিন পর পর ক্যাম্পাসে রক্ত ঝরলে বা লাশ পড়লে শিক্ষাঙ্গনের অসুস্থতা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়, তারপর আবার তা স্তিমিত হয়ে যায়। তারপর লাশ পড়লে আবার হয় আলোচনা, কিন্তু জাতির মস্তিষ্ক, সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের চিকিত্সার উদ্যোগ নেয়া হয় না। বুয়েটে সনির লাশ পড়লে জাতি বিচলিত হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবু বকর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শরীফুজ্জামান নোমানী, ফারুক হোসেন, নাসরুল্লাহ নাসিম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মহিউদ্দিন মাসুম, হারুন অর রশীদ, আসাদুজ্জামান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জুবায়ের আহমেদ লাশ হলে প্রতিবারই বিশ্ববিদ্যালয়ের অসুস্থতা নিয়ে সুশীল সমাজে আলোচনা উঠলেও সরকারি উদ্যোগের অভাবে তা স্তিমিত হয়ে যায়। এভাবে শিক্ষাঙ্গনের এ নৈরাজ্য আজ এক দীর্ঘমেয়াদি অসুখে পরিণত হয়েছে। জাতির মস্তিষ্কের এ দীর্ঘমেয়াদি অসুখের স্থায়ী চিকিত্সা প্রয়োজন। কিন্তু সরকারের তেমন কোন পরিকল্পনা আছে বলে মনে হয় না। এ পরিসরে এ চিকিত্সার প্রেসক্রিপশন দেয়া যাবে না। তবে একটি অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের মাধ্যমে এ দীর্ঘমেয়াদি অসুখের চিকিত্সার সূচনা করার কথা ভাবা যায়। এ ওষুধটির নাম ‘নির্বাচন’। শিক্ষাঙ্গনে নির্বাচনের নিয়মিত চর্চার সূচনা করলে চলমান নৈরাজ্য অনেকটাই দূর হতে পারে। নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে ছাত্রনেতারা নেতৃত্বে আসার জন্য তাদের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরির লক্ষ্যে সব সংগঠনের ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে ভাল ব্যবহার করে তাদের মন জয়ে সচেষ্ট হবেন। চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি থেকে সরে এসে ভাল কাজের মধ্যদিয়ে সবার সমর্থন অর্জনের চেষ্টা করবেন। শিক্ষকদের মধ্য থেকে নিয়মমাফিক নির্বাচনের মাধ্যমে ভিসি নিয়োগের চর্চা শুরু করলে এক্ষেত্রেও উন্নতি হবে। দলীয় স্তাবক ও নতজানুদের পরিবর্তে তখন সুযোগ্য একাডেমিকদেরকে সাধারণ শিক্ষকরা ভিসি হবার সুযোগ করে দেবেন। প্রশ্ন হল, কঠিন না হলেও নির্বাচন করার এ কাজটির সূচনা হয় না কেন? এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা ইভিএম-এর জটিলতা নেই, কাজেই সরকার চাইলেই কি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সূচনা হতে পারে না? নিশ্চয়ই পারে। তবে সরকার হয়তো এসব ক্ষেত্রে দলীয় জয়-পরাজয়ের অঙ্ক করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। আর সেজন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন দিতে সরকারের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। আর এ কারণে জাতির মস্তিষ্ক হিসাবে বিবেচিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হানাহানি, নৈরাজ্য আর দলবাজি হ্রাস না পেয়ে কিছুদিন পর পর লাশ পড়ছে।

Partner site : online news / celebrities /  celebrity image
website design by Web School.
Read more

এমন নৃশংসতাও কি বন্ধ হবে না!

,

ফর্সা এক তরুণকে দুই হাত বেঁধে পেটাচ্ছে বিএসএফ। ইয়া লম্বা লাঠি দিয়ে একের পর এক আঘাত হানা হচ্ছে যুবকটির শরীরে। একবার মনে হলো, যিশুর মতো তাকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছে বুঝি! দুই হাত প্রসারিত দুদিকে। খাড়া হয়ে আছে যুবকটি। বেদম পিটিয়ে চলছে জওয়ানরা। স্পষ্টতই বোঝা যায়, পিটুনি খেয়ে আর সইতে পারছে না সে। নেতিয়ে পড়ে নিচের দিকে। ঝুলে পড়েছে দড়ি কিংবা তারে_যাতে তার হাত বাঁধা ছিল। নেতিয়ে পড়া যুবকটির গায় তখনো বাঁশ কিংবা বড় সেই লাঠির আঘাত চলতে থাকে। যুবকটি শুয়ে পড়তে চায়। জওয়ানের জোয়ানকি যেন তর সয় না! আঘাতের পর আঘাত চলে যুবকের গায়। সইতে পারে না যুবক। পা জোড়া শূন্যে উঠে যায়। এবার মারের কৌশল বদলে যায়। শূন্যে ঝুলে থাকা পায়ের তালুতে চলে আঘাতের পর আঘাত। এর আগে যে মুহূর্তে যুবকটি নেতিয়ে পড়েছিল, ওই সময় তার পরনের কাপড়চোপড় খুলে ফেলা হয়। একেবারে বিবস্ত্র করা হয় তাকে। টেলিভিশনের পর্দায় তখনো স্পষ্ট দেখা যায়, উলঙ্গ যুবকটিকে পিটিয়ে চলেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কতিপয় সদস্য। ভারতের এনডিটিভি কর্তৃপক্ষ ছবিতে অস্পষ্টতা আনে যুবকটির উলঙ্গতা রক্ষা করতে। দুর্বিষহ চিত্র দেখে যে কেউ মনে করতে পারেন একাত্তরের কথা। সে সময় আমাদের ওপর এভাবেই নৃশংসতা চালিয়েছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। কিন্তু যদি কেউ ভারতের ভূমিকার কথা তুলতে চান, তুলতেই পারেন। একাত্তরে তারা আমাদের রক্ষায় এগিয়ে এসেছিল। আমরা ৪০ বছর পরও সেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আগামীতেও প্রকাশ করে যাব। কিন্তু সম্প্রতি কী হচ্ছে?
মনে হয় না কঠিন কোনো মন্তব্য করার প্রয়োজন আছে। যাঁরা কম্পিউটার ব্যবহার করেন, যাঁরা ইন্টারনেটে খোঁজখবর রাখেন, তাঁরা ইচ্ছা করলে সেই নৃশংসতা এখনো দেখতে পারেন। দেখতে হলে চোরাই কোনো লিংকে যেতে হবে না। যে টেলিভিশন প্রধানত এই সংবাদটি প্রচার করেছে, অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী সেই টিভি চ্যানেলটির লিংকে যান। সহজেই পেয়ে যাবেন ইন্টারনেটে।www.ndtv.com লিংকে গিয়ে bsf-এ সার্চ করলে দেখা যাবে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের নৃশংসতার সেই দৃশ্য।
এবার হয়তো বিএসএফের মহাপরিচালক রামণ শ্রীবাস্তব আর বলতে পারবেন না, এসব ঠিক নয়, এগুলো স্বাভাবিক মৃত্যু। কারণ যে দৃশ্যটি আমরা গত সপ্তাহান্তে দেখেছি, সেটি প্রচার করেছে শ্রীবাস্তব মহোদয়ের দেশের চ্যানেলই। আর যা এই লেখার সময় পর্যন্ত দেখা গেছে, সেও বাংলাদেশের কোনো প্রচারমাধ্যমে নয়। সেটি আধুনিক প্রযুক্তি সুবিধার সুফল।
দৃশ্যটি দেখার পর স্বাভাবিকভাবেই যে কারো মনে আসতে পারে বছর ৭ জানুয়ারি ঘটে যাওয়া আরেকটি ঘটনার কথা। এ বছরের জানুয়ারি মাসের মতোই ঘটনা। আগেরবার ফেলানীর ঝুলন্ত লাশের চিত্র আমাদের কাঁদিয়েছিল। কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তের ৯৪৭ আন্তর্জাতিক সীমানা পিলারের কাছে ফেলানী (১৫) কাঁটাতারে ঝুলে ছিল তিন দিন। সে সময় ভারতের নয়াদিলি্লতে বিএসএফ ও বিজিবিপ্রধান পর্যায়ে যৌথ বৈঠক শেষে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী প্রধান ঘোষণা করেছিলেন, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে আর আগ্নেয়াস্ত্র প্রদান করা হবে না। আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, বাংলাদেশি কোনো নাগরিককে আর হত্যা করা হবে না। কিন্তু মাসকাল অতিবাহিত হতে না হতেই সাতক্ষীরা জেলার গাজীপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বসন্তপুর গ্রামের রেকাতুল ইসলাম (১৭) নিহত হয়। আমরা সংক্ষুব্ধ হয়েছিলাম আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের প্রতি তাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আচরণে। যদিও আমরা আরো আগে থেকেই হিসাব করছিলাম, আর বারবারই হিসাব মিলছিল না। আমরা বুঝতে পারছিলাম না এই আচরণ যে করতে পারে, সে কি আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র ভারত? যে নাকি একাত্তরে আমাদের প্রায় এক কোটি মানুষকে ৯ মাস পর্যন্ত থাকার ব্যবস্থা করেছিল? যে নাকি আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আমাদের সহায়তা করেছিল?
প্রশ্নটা স্বাভাবিকভাবেই আমাদের করতে হয়। প্রশ্ন করতেও কষ্ট হয়। যখন দেখি, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একটি দল ক্ষমতায় এবং যে দলটি ভারতের বন্ধুত্ব স্বীকার করে আন্তরিকভাবে। তার বহিঃপ্রকাশও বারবারই ঘটেছে। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তিগুলো এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ অন্যরাও বর্তমান সরকারি দলকে ভারতের প্রিয় দল হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে। তাদের কেউ কেউ বর্তমান সরকারি দলকে ভারতের দালাল বলতেও দ্বিধা করে না। এমন পরিস্থিতিতে এই দলটি ক্ষমতাসীন হওয়ার পরও ভারতীয় সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা বন্ধ করা হয় না। তখন সংগত কারণেই নানামুখী প্রশ্ন আমাদের মনে জাগে। আমরা আত্মজিজ্ঞাসার মুখোমুখি হই, তাহলে ভারত কি প্রকৃতই এমন? কই, তারা তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেও খুন করার কাজ থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। এই সরকারের আমলে গত ৩ বছরে সীমান্তে অন্তত ২০৩ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ। এ সময় বিএসএফের হাতে অপহৃত হয়েছে অনেক বাংলাদেশি। সন্দেহ করা হয়, এদের অনেককেই মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে বিএসএফের হাতে। এদের সংখ্যা মিলিয়ে বছরে শতাধিক মানুষ খুন হয়েছে বলে সহজেই অনুমান করা যায়।
আন্তর্জাতিক আইনে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নিরস্ত্র বাংলাদেশিদের হত্যা করার কোনো বিধানই নেই আইনে। সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে অন্য দেশের নাগরিক কোনো অপরাধ করে থাকলে সেই দেশের আইন অনুযায়ী তার বিচারের বিধান আছে। আর সেই বিধান অনুযায়ী কারাদণ্ড দেওয়ার কথা। বাংলাদেশের কোনো নাগরিক যদি ভারতে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করে, তাহলে ভারতের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে এবং তাকে সেই দেশের আইন অনুযায়ী বিচারের মুখোমুখি করতে পারে। বিধান অনুযায়ী তার সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে মাত্র তিন মাসের কারাদণ্ড। কোনো মৃত্যুদণ্ডের বিধান এই অপরাধের জন্য সেখানে নেই।
আর যদি থাকতও তাহলেও কি এভাবে নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা করা সম্ভব হতো? কিন্তু বাস্তবতা আমরা কী দেখছি? দেখছি, কিভাবে গত ১০ বছরে ভারতীয় বাহিনীর হাতে আমাদের দেশের ৮৭৫ জন মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে।
ভারত আমাদের নিকট প্রতিবেশী বৃহৎ দেশ। এই দেশের প্রতি আমাদের ঋণ অনেক। তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশাও অনেক। বড় দেশ হিসেবে এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তাদের সহযোগিতার কথা স্মরণ করে আমরা অবশ্যই তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাব। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমাদের নিরীহ মানুষগুলোকে তারা পাখি শিকারের মতো গুলি করে হত্যা করবে।
মন্ত্রী বা সচিব পর্যায়ে, এমনকি পতাকা বৈঠকগুলোতেও বলা হয়, আর কোনো হত্যাকাণ্ড হবে না। বিএসএফের প্রধান এমনও বলেছেন যে স্পর্শকাতর এলাকাতে বিএসএফের হাতে মারণাস্ত্র থাকবে না। কিন্তু হত্যা করা যদি বিএসএফের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে মারণাস্ত্র দিয়ে মারতে হয় না। এটাও তারাই দেখিয়ে দিয়েছে। তারা পানিতে চুবিয়ে বাংলাদেশি খুন করেছে। ফেলানীকে খুন করা হয়েছে কাঁটাতারে আটকে। সর্বশেষ যে দৃশ্যটি আমরা টেলিভিশনের সুবাদে দেখার সুযোগ পেলাম, সেই দৃশ্যটিসহ অনেক ঘটনাতেই মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। কিন্তু খুন হয়েছে ঠিকই।
তাই আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের কাছে হয়তো অনুরোধ করতে পারি, এভাবে নিরীহ মানুষকে খুন করা বন্ধ করুন। ওপরের পর্যায়ে যেমন সহমর্মিতাসুলভ কথা বলা হয়, তা যেন স্থানীয় পর্যায়ে তথা একেবারে তৃণমূল পর্যায়েও কার্যকর হয়। আমরা আর সীমান্তে কোনো মানুষকে খুন হতে দেখতে চাই না। আমরা চাই না, ভারত আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র থেকে সরে যাক।

Partner site : online news / celebrities /  celebrity image
website design by Web School.
Read more

আবার ক্যু-চক্রান্ত, আবার একজন মেজর জিয়া?

,

Abdul.Gaffar.Chowdhury's picture
বাংলাদেশে আবারও একটি সামরিক ক্যু ঘটানোর চেষ্টা হয়েছিল। আবারও একজন মেজর জিয়া (মেজর সৈয়দ মোঃ জিয়াউল হক) এই ব্যর্থ ক্যু-প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি এখন পলাতক। তবে পলাতক অবস্থাতেই ষড়যন্ত্র এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন। সেনাবাহিনী তাকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছে। তাকেও অবিলম্বে খুঁজে বের করে গ্রেফতার করা প্রয়োজন। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের সঙ্গে এই নতুন মেজর জিয়াকেও কঠোরভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এই রাষ্ট্রদ্রোহী তৎপরতার পেছনে কারা আছে, কারা ইন্ধন জুগিয়েছে এবং এর উদ্দেশ্য কী ছিল তা জানা যাবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাব, তিনি বিডিআর বিদ্রোহের মতো অসীম সাহস ও প্রজ্ঞার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন। আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকেও ধন্যবাদ জানাব, এবার তারা কোনো 'জিয়া-কুহকে' মজেননি। বরং নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের প্রতি অনুগত থেকে কঠোরভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন এবং দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে একটি ভয়াবহ ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করেছেন।
ক্যুটি অঙ্কুরেই ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, একজন পালের গোদা 'মেজর জিয়া' এখনও পলাতক এবং সক্রিয়। ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, সেসব সেনা কর্মকর্তার দু'একজন ছাড়া অন্যরা সম্ভবত এখনও মুক্ত আছেন (আমার এই লেখা শুরু করার সময় পর্যন্ত তাদের গ্রেফতার হওয়ার খবর পাইনি)। সেনা সদর দফতরের সংবাদ সম্মেলনে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মাসুদ রাজ্জাক বলেছেন, 'এই চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত কিছু সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তা তাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। তদন্ত শেষে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
এই ব্যর্থ ক্যুটি যে কোনো আকস্মিক ঘটনা নয় বরং একটি সুপরিকল্পিত অভ্যুত্থান চেষ্টা, তা বোঝা যায় এর সঙ্গে একজন জিওসি র‌্যাঙ্কের সেনা কর্মকর্তার জড়িত থাকার খবরে। গুজব, তিনি হয় গৃহবন্দি অথবা নজরবন্দি আছেন। খবরটি সঠিক হলে বলতে হবে এই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের লক্ষ্য ছিল দেশে আবার বন্দুকের সাহায্যে একটি রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটানো এবং সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করা। এই উদ্দেশ্যের কথাটি সেনা সদর দফতরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রাজ্জাকও বলেছেন।
কোনো ক্যু ব্যর্থ করে দেওয়াটা বড় কথা নয়, যদি তার শিকড় উৎপাটন করা না যায়। পাকিস্তানের প্রথম লিয়াকত সরকারের বিরুদ্ধে ১৯৫০ সালে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা হয়েছিল। তা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়। সেনাপ্রধান জেনারেল আকবরকে অপসারণ করা হয় এবং কয়েকজন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাসহ কিছু অসামরিক ব্যক্তিকেও গ্রেফতার করে বিচারে দণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। এই অভ্যুত্থানের পেছনের কার্যকারণ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য খতিয়ে দেখা হয়নি। নেপথ্যের নায়কদেরও খুঁজে বের করা হয়নি। পরের বছর ১৯৫১ সালের ১৭ অক্টোবর রাওয়ালপিন্ডির সেনা দফতরের পাশের মাঠে জনসভায় বক্তৃতাদানরত অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানকে খুলি করে হত্যা করে তার সরকারের পতন ঘটানো হয়।
বাংলাদেশের বর্তমান ব্যর্থ ক্যুর পেছনে আরও একটি বড় ক্যুর ষড়যন্ত্র আড়াল করা নেই, তা কে বলবে? মেজর জিয়া বর্তমান ক্যু-প্রচেষ্টার একজন ফ্রন্টম্যান হতে পারেন; কিন্তু তার এবং তার সহযোগীদের পেছনে আসল পালের গোদা কারা এবং তাদের রাজনৈতিক মতলব কী ছিল তা ভালোভাবে খুঁজে বের করে দেশবাসীর কাছে মুখোশ খুলে দেওয়া এবং এই পৌনঃপুনিক চক্রান্ত শিকড়সমেত উপড়ে ফেলা প্রয়োজন। নইলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নিরাপদ হবে না; রাজনৈতিক সন্ত্রাস বন্ধ হবে না। এই ধরনের ক্যু-চক্রান্ত চলতেই থাকবে। বাংলাদেশে অন্য কোনো পথে সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব না হলে এবং একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে গ্রেফতার করা থেকে সরকারকে নিবৃত্ত করতে না পারলে সেনাবাহিনীর একাংশকে উস্কে দিয়ে রক্তপাত ঘটিয়ে হলেও বর্তমান সরকারকে উৎখাতের যে চেষ্টা হবে, এটা হালে একেবারে ওপেন-সিক্রেট হয়ে উঠেছিল। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেরই ধারণা, বিএনপি-জামায়াত, হিযবুত তাহ্রীর এবং সেনাবাহিনীতে তাদের অনুগত কিছু সেনা অফিসারের পরিকল্পনাটা ছিল একেবারে ছকবাঁধা। এই ছকবাঁধা কার্যক্রমটিই সরকার এবং সেনাবাহিনী ব্যর্থ করে দিয়েছে। বিডিআর বিদ্রোহের চক্রান্ত যেমন আগে দেশের সামরিক অথবা অসামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আঁচ করতে পারেনি, এবার তা হয়নি।
এক শ্রেণীর রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের এই ধারণাটি কতটা সঠিক তা বলার সময় এখনও আসেনি। তবে দুয়ে দুয়ে যেমন চার হয়, তেমনি এই ব্যর্থ ক্যুর আগে-পিছে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা কি একেবারে সম্পর্কহীন বলা যায়? গোলাম আযমকে এবার গ্রেফতার করা হবে এটা নিশ্চিত হয়ে উঠতেই বিএনপি-জামায়াতকে আবার মাঠে তৎপর হয়ে উঠতে দেখা যায়। গোলাম আযম নিজেই হুঙ্কার ছাড়েন, তাকে গ্রেফতার করার সাহস সরকারের হবে না। এই হুঙ্কার ছাড়ার খুঁটির জোরটি তার কোথায় ছিল?
বিএনপি নেত্রী এই সময়েই ঘোষণা দেন, তিনি সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত না করে ঘরে ফিরবেন না। তার কথা ছিল নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করা নয়, সরকারকে তিনি উৎখাত করবেন। এই উৎখাত করার পন্থাটা কী তা তিনি বলেননি, কিন্তু এখন অনুমান করা যায়। ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি তিনি ছেড়েছেন, কিন্তু ক্যান্টনমেন্টের রাজনীতি যে ছাড়েননি, এটা তার পরবর্তী রোডমার্চ শেষে চট্টগ্রামের ভাষণে বোঝা যায়। তিনি বলেন, 'সরকার সামরিক বাহিনীর ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে। সামরিক বাহিনীর লোক গুম হচ্ছে।' তখন তার বক্তব্যের তাৎপর্যটি তেমন বোঝা যায়নি। এখন বোঝা যাচ্ছে।
আসলে বর্তমান ব্যর্থ ক্যুর তৎপরতা তখন চলছে এবং তা ব্যর্থ হওয়ার আভাস পেয়ে মেজর জিয়া ২৩ ডিসেম্বর পালিয়ে যান। ক্যুর প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মেজর পদবির এক সেনা কর্মকর্তাকে ৩১ ডিসেম্বর সেনা আইনের ধারায় গ্রেফতার করা হয়। ২৬ ডিসেম্বর মেজর জিয়া একটি তথাকথিত গ্রেফতার ও বর্ণিত সেনা কর্মকর্তাদের ওপর নির্যাতন সংক্রান্ত একটি বানোয়াট কাহিনী ই-মেইলযোগে প্রচার করেন। দুটি ই-মেইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে প্রচার করা হয়, 'সেনাবাহিনীতে মধ্যম সারির অফিসাররা অচিরেই বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছেন। ৮ জানুয়ারি নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহ্রীর সংগঠন মেজর জিয়ার ইন্টারনেট বার্তাটিকে ভিত্তি করে সামরিক অভ্যুত্থানের উস্কানিমূলক প্রচারপত্র ছড়ায়। ৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামের জনসভায় খালেদা জিয়া সামরিক বাহিনীতে নির্যাতন ও গুমের ঘটনা ঘটছে বলে উল্লেখ করে উস্কানিমূলক বক্তৃতা দেন। সামরিক বাহিনীকে তার এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে হয়েছিল।
সেনা দফতরের সংবাদ সম্মেলনেও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রাজ্জাক ক্যু ঘটানোর চক্রান্তের বিশদ বিতরণ জানিয়ে বিএনপি বা খালেদা জিয়ার নামোচ্চারণ না করে বলেছেন, '৯ জানুয়ারি একটি রাজনৈতিক দল সেনাবাহিনীতে গুমের ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ করে, যা সেনাবাহিনীসহ সচেতন নাগরিকদের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত উস্কানিমূলক বিতর্কের সৃষ্টি করে।' বলাবাহুল্য, ৯ জানুয়ারি সেনাবাহিনীকে উস্কানি দিয়ে চট্টগ্রামের জনসভায় ভাষণ দেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। অনেকেরই এখন প্রশ্ন, ডিসেম্বর মাস থেকে সেনাবাহিনীর কিছু লোকের ক্যু ঘটানোর চক্রান্ত, এক সেনা কর্মকর্তার গ্রেফতার, মেজর জিয়ার পলায়ন ইত্যাদি কথা জানা না থাকলে বা এসবের সঙ্গে বিএনপি নেত্রীর যোগাযোগ না থাকলে সামরিক বাহিনীতে ক্যু ব্যর্থ করার জন্য যা অপ্রকাশ্যে ঘটছে, তাকে নির্যাতন ও গুমের ঘটনা হিসেবে সাজিয়ে ৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামে কী করে তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেন? তার সেই ভাষণই এখন তার জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
জানা যায়, এই ব্যর্থ ক্যুর পেছনে বিদেশের কিছু বাংলাদেশির যোগাযোগ ও সহযোগিতা ছিল। তারা কারা তা তদন্ত করে বের করা দরকার। অনেকে সন্দেহ করেন, ব্রিটেনে ও আমেরিকায় জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি রয়েছে এবং ব্রিটেনে তারেক রহমান লোকচক্ষুর অন্তরালে বাস করলেও জামায়াতিদের সঙ্গে যুক্তভাবে সরকারবিরোধী নানা অনিয়মতান্ত্রিক তৎপরতায় লিপ্ত। একাত্তরের কিছু যুদ্ধাপরাধী এখনও ব্রিটেনে ঘাঁটি গেড়ে আছে এবং নানা অপতৎপরতায় জড়িত। বাংলাদেশ সরকারের উচিত, সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তাদের অপতৎপরতা বন্ধ করার জন্য ব্রিটিশ সরকারের ওপর চাপ দেওয়া এবং দুই সরকারের যৌথ কার্যক্রম গ্রহণ।
সেনা দফতরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনের খবরেই জানা যায়, সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র সফল করার লক্ষ্যে মেজর জিয়া ৯ ও ১০ জানুয়ারি তার অপারেশন পরিকল্পনার কপি ই-মেইলে চাকরিরত সেনা কর্মকর্তাদের কাছে পাঠান। সেনা অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি চলে ১০ ও ১১ জানুয়ারি। খালেদা জিয়া নোবাহিনীর জন্য উস্কানিমূলক বক্তৃতাটি দেন ৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামের জনসভায়। এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠেকায় পড়ে অবশ্য বলেছেন, সেনা অভ্যুত্থানের চক্রান্তের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্কই নেই। সবই প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যা অভিযোগ। তিনি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দা করেছেন। কিন্তু এই ক্যু ঘটানোর চক্রান্তের নিন্দা জানাতে ভুলে গেছেন। থলের বিড়ালটি সম্ভবত লুকোতে চেয়েছেন।
সেনা সদর দফতরের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, ক্যু-চক্রান্ত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য গত ২৮ ডিসেম্বর একটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে। এটা সেনাবাহিনীর একশ্রেণীর কর্মকর্তার অপরাধ সম্পর্কে সেনাবাহিনীর নিজস্ব তদন্ত। কিন্তু এই রাষ্ট্রদ্রোহী চক্রান্তের পেছনে যে অসামরিক অশুভ চক্র কাজ করেছে এবং এখনও করছে, তাদের মুখোশ উন্মোচন ও চক্রান্তের বিষদাঁত উপড়ে ফেলার জন্য সরকারের উদ্যোগে একটি জাতীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা প্রয়োজন এবং এই তদন্তের পর সঠিক তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এই 'ক্যান্টনমেন্ট রাজনীতি'র হোতাদের তারা যতই শক্তিশালী হোক বিচার ও শাস্তি হওয়া দরকার। বাংলার মানুষের গণতান্ত্রিক সহিষ্ণুতা আর কতকাল ধৈর্যের পরীক্ষা দেবে? গণতন্ত্রকে বাঁচার স্বার্থেই এবার প্রত্যাঘাতের নীতি গ্রহণ করতে হবে।

Partner site : online news / celebrities /  celebrity image
website design by Web School.
Read more

গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন এবং সংকট সৃষ্টি করে ফায়দা হাসিল

,

Fakir.Abdur.Razzak's picture
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে মিলিত হয়েছিলেন দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা। আলোচনায় কোন দলের পক্ষ থেকেই (দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া) নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে নাম উল্লেখ করে কেউ প্রস্তাব করেননি। অনেকে বলেছেন পরে নাম পাঠিয়ে দেয়া হবে। তবে বিএনপিসহ বেশিরভাগই নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আবার গঠনের ব্যাপারে আলোচনার তাগিদ দিয়েছেন। বিএনপি তো এজেন্ডা নিয়ে কোন কথাই বলেনি। তারা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থায় আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারেই আলোচনা করতে সম্মত বলে রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি নাকি তার সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার কথা বলেছেন। অর্থাৎ দেশের অধিকাংশ বিরোধীদল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের পক্ষে রাষ্ট্রপতির পদে তাদের মতামত জানিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ করলেও তারা কোন নাম নিয়ে আলোচনা করেনি_ যদিও ওই সময় প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী দেশের বাইরে ভারতের ত্রিপুরা সফরে ছিলেন। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে দায়েরকৃত এক রিট মামলার রায় অনুযায়ী হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে রায় দিয়েছেন। সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের পর জাতীয় সংসদ চূড়ান্তভাবে ওই ব্যবস্থা বাতিল করেছে। উচ্চ আদালতের রায়ে বা পর্যবেক্ষণে অগত্যা দুটি জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে করার যে কথা বলা হয়েছিল জাতীয় সংসদ সেটাও আমলে না নিয়ে ওই ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবেই বাতিল করেছে। এটা এখন দেশের সর্বোচ্চ আইন। তাই যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করতে হয়, তাহলে জাতীয় সংসদের মাধ্যমে আইনটি বাতিল বা সংশোধন করতে হবে। এ অবস্থায় সরকার কী ভাবছে বা কী করা যেতে পারে, তা কেউ জানে না। এদিকে বিএনপি ও তার সহযোগীরা মনে হচ্ছে আগামী দুই বছরে তুমুল আন্দোলন করার চেষ্টা চালাবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারই তাদের চাই।
এরই মধ্যে ড. কামাল হোসেন গা-ঝাড়া দিয়ে তৎপর হয়ে উঠেছেন। তিনিও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে এসেছেন। ওই ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাম উল্লেখ না করে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন_ দেশের বড় বড় আইনজীবীরাও অগণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার পক্ষে কথা বলছেন। ড. কামাল হোসেন দেশের রাজনৈতিক ক্রাইসিসের সময় অতীতেও বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠার ঘটনা দেশের রাজনীতি-সচেতন মানুষ লক্ষ্য করেছে। এখন দেশে সরকারবিরোধী আন্দোলন যখন চাঙ্গা করার চেষ্টা চলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের দাবিতে বিরোধী মহল সোচ্চার হচ্ছে, তখনই ড. কামাল হোসেন তাদের সুরে সুর মিলিয়ে বেশ তৎপর হয়ে উঠেছেন। ১/১১-র সেনাসমর্থিত ড. ফখরুদ্দীন সরকারও দেশে জরুরি আইন জারির সময় দেশের বেশ কয়েকটি মহলের সঙ্গে ড. কামালও ছিলেন তৎপর। তারপর দুই বছর ধরে দুই নেত্রীকে মাইনাস করা, কিংস পার্টি গঠন ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নতুন দল গঠন ঘটনার সময়ও তিনি দারুণভাবে ব্যতিব্যস্ত ছিলেন। বলা হয়, ওই সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে ক'জন উপদেষ্টা নেপথ্যে থেকে কাজ করেছিলেন ড. কামাল হোসেন ছিলেন তাদের অন্যতম। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচন এবং মহাজোটের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর প্রথমে দেশত্যাগ, পরে দেশে ফিরে আইন পেশায় মনোযোগ এবং তার গণফোরাম রাজনীতি থেকেও নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে একেবারে নীরব হয়ে গিয়েছিলেন। এরই মধ্যে গণফোরামে কোন্দল-বিভক্তি প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে, তবু তিনি রাজনীতির ব্যাপারে আর উৎসাহী ছিলেন বলে মনে হয়নি। বেশ কিছুকাল এভাবে কাটিয়েই গত কয়েক মাস তিনি আবার তৎপর হয়ে উঠেছেন। দলের কর্মকা- না থাকলেও প্রায় প্রতিদিনই ড. কামালের কোন না কোন বিবৃতি বা খবর সংবাদপত্রে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইদানীং তিনি বিএনপি-জায়ামাত ও অন্যদের সুরে সুর মিলিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের প্রশ্নে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। এমনকি যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়ার ব্যাপারেও তিনি লাজ-লজ্জা ভুলে গিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
রাজনীতির ব্যাখ্যায় ড. কামাল সর্বদাই ঘড়েল রাজনীতিক এবং গভীর পানির মাছ হিসেবে বিবেচিত 'তিনি যখন আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন তখন অগত্যা দু'বার তার রহস্যজনক সংগঠনবিরোধী তৎপরতার দরুন দল থেকে তিনি বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। মূলত পশ্চিমা রাজনীতির তলপিবাহক ড. কামল পঁচাত্তরের আগস্টের পর প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন আওয়ামী লীগকে প্রগতিশীল রাজনীতির ধারার বাইরে পুঁজিবাদী রাজনীতির পরিপূর্ণ সমর্থক করে গড়ে তোলার জন্য। কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন। সেই থেকে তিনি দলের মধ্যে বিতর্কিত ব্যক্তিত্বে পরিণত হন এবং এ পর্যায়ে দল আর তার নেতৃত্বের প্রয়োজন বোধ করেনি। জাতীয় বা দলীয় রাজনীতিতে যখনই কোন সংকট নেমে আসে তখনই তিনি তৎপর হয়ে ওঠেন। সেই সংকট মোচন তার লক্ষ্য নয়, সংকট থেকে ফায়দা লুটাই তার আসল উদ্দেশ্য। ১/১১-র পরও কথা উঠেছিল জাতীয় সরকার গঠনের। সেক্ষেত্রে ড. কামালই হবেন জাতীয় সরকারের প্রধান।
এখন তিনি তৎপর হয়ে উঠেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আবার ফিরিয়ে আনার জন্য। রাজনৈতিক বিরোধ ও সংকট যখন দেশে বৃদ্ধি পায় তখনই দেশের একটি বিশেষ মহল তৎপর হয়ে ওঠে, আর সেই মহলের অঘোষিত নেতা হয়ে বসেন ড. কামাল হোসেন। কিছুদিন আগে তিনি যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন ও বিচার প্রসঙ্গে এমন মন্তব্য করেছিলেন, যা বিচার কার্যক্রমের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারত। তার সেই বক্তব্যের পর দেশব্যাপী প্রতিবাদ-ঘৃণা প্রকাশ পেয়েছে। ঘাতক, দালাল নির্মূল কমিটি তো তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ ও নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। অথচ ১৯৭৩ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার সংক্রান্ত আইনটি রচনার ব্যাপারে তারও হাত ছিল। সংবিধানের খসড়া রচনা কমিটির তিনিই তখন প্রধান ছিলেন। প্রায় ৪০ বছর পরে এসে তিনি কোন স্বার্থ উদ্ধারের উদ্দেশে জাতীয় স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের জঘন্য শত্রু, তাদের কৃতকর্ম এবং দেশের আপামর মানুষের দাবি (যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার চিহ্নিত শত্রুদের বিচার করতেই হবে) ভুলে গিয়ে ভিন্ন অবস্থান নিলেন? তাহলে কি ধরে নিতে হবে, দেশে অবিলম্বে রাজনৈতিক সংকট নেমে আসছে বুঝতে পেরে ড. কামাল গং এখনই তৎপর হয়ে উঠেছেন?
রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সঙ্গে সম্প্রতি যে রাজনৈতিক সংলাপ সমাপ্ত হয়েছে, তাতে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের পক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরেছেন। তারা কেউই স্পষ্টভাবে নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে তেমন কোন আগ্রহ দেখাননি। সর্বশেষ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিদলও নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রশ্নে সুনির্দিষ্ট কোন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেননি। তারা মনে হয় তাদের পূর্ব অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসে বলেছেন_ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গঠনের প্রশ্নে রাষ্ট্রপতি যদি কোন সংলাপে ডাকেন তাহলে তারা আলোচনা করতে রাজি। সংবাদপত্রে প্রকাশিত তাদের বক্তব্যে সেটাই প্রতিভাত হয়েছে। দৃশ্যত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সংবিধান সংশোধন হয়েছে। কিন্তু দেশের স্বার্থেও শুভ লক্ষণ। সংসদীয় গণতন্ত্রে নির্বাচিত জনপ্রতিধিরাই দেশ ও সরকার পরিচালনা করবে_ এটাই আন্তর্জাতিকভাবে সত্য ও মোদ্দা কথা। এর কোন প্রকার ব্যত্যয় ঘটলেই গণতন্ত্রের আদর্শ ও রাজনীতি লঙ্ঘিত হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সে বিবেচনায় খ-কালীন সময়ের জন্য হলেও যে তা অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, দেশ-বিদেশের কোন গণতন্ত্রকামী মানুষই এটা মেনে নিতে পারে না। তবু একদা দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বিএনপির ঘোর আপত্তি সত্ত্বেও দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন হয়েছিল। আজ আবার যদি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ওই ব্যবস্থার পুনর্বহাল করতে হয়, তাহলে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে সব দলের মতামতসাপেক্ষে দুইটি মেয়াদের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আবার সংবিধান সংশোধন না করেও সবার সঙ্গে আলোচনা করে গ্রহণযোগ্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা গঠন করা যেতে পারে। যাদের কাজ হবে তিন মাসের মধ্যে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে সংলাপ করেছেন। সংলাপে অনেক দলের পক্ষ থেকেই সার্চ কমিটি গঠন, আইন প্রণয়ন, কমিশনার নিয়োগের প্রশ্নে নীতিমালা করা ইত্যাদি কথা বলেছেন। অবশেষে সংলাপ শেষে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে একটি আইন প্রণয়নের প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠানোর কথা চিন্তা করেছেন। সরকারি দল এ প্রসঙ্গে বলেছে_ রাষ্ট্রপতি তেমন প্রস্তাব দিলে জাতীয় সংসদে তা বিবেচনা করা হবে। বর্তমান আইন বা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন নিয়োগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির; তবে সে প্রস্তাব আনতে হবে সরকারের পক্ষ থেকে। এই সীমাবদ্ধতার কারণে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আহূত ওই সংলাপ সম্পর্কে অনেকেই 'অহেতুক কালক্ষেপণ' বলে মন্তব্য করেছেন। তবে এই সংলাপের ইতিবাচক দিক হলো_ অতীতে কখনই নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি সব দলের সঙ্গে এভাবে সংলাপে বসে কোন পরামর্শ চাওয়ার নজির নেই। সেদিক থেকে বর্তমান রাষ্ট্রপতি একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। আলোচনার ফল যা-ই হোক না কেন, সব দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বসেছিলেন_ এটাই চলমান রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক দিক। এ উদাহরণ ভবিষ্যতে অন্যান্য ক্ষেত্রে শুভ কোন ফলও বয়ে আনতে পারে। তবে নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে আমাদের অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়_ কোন নির্বাচন কমিশনই অতীতে যেমন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি, তেমনি ভবিষ্যতেও হবে বলে মনে হয় না। এ অবস্থায় বহুমুখী আক্রমণ, অবজ্ঞা, নিন্দা ও প্রত্যাখ্যান করার নানা ঘটনার পর বর্তমান ড. শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন শেষে দু-একটি মহল ছাড়া সবার কাছেই এক ধরনের গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। আর সেটা পেয়েছে কমিশনের সাধ্যমতো নিরপেক্ষ কর্মতৎপরতার উদাহরণ সৃষ্টির কারণে।
ড. শামসুল হুদা ও তার দুই সদস্য নিজেদের দেশবাসীর সামনে প্রমাণ করেছেন, নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তারা ছিলেন নিরপেক্ষ এবং তাদের অধীনে অনুষ্ঠিত সবগুলো নির্বাচন যতদূর সম্ভব তারা নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার আন্তরিক চেষ্টা করেছিলেন। সে প্রচেষ্টায় তারা এতখানি সফল হয়েছেন যে, অতীতে তেমন সাফল্যের পরিচয় কেউ দিতে পারেননি। তাই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দু-একটি দলের প্রস্তাবের কথা না বলেও আমরা মনে করি আইন প্রণয়ন করে হলেও বর্তমান নির্বাচন কমিশনকেই আর এক মেয়াদের জন্য নিয়োগ দেয়া সবচেয়ে বেশি যুক্তিযুক্ত হবে। কারণ বর্তমান কমিশন এখন সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে অনেক বেশি অভিজ্ঞ। এই অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যও নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কমিশনকে ছয় মাস থেকে এক বছর অপেক্ষা করতে হবে, যা বর্তমান কমিশনের দরকার হবে না। এ অবস্থায় আরও দুজন নতুন কমিশনার অর্থাৎ মোট পাঁচজনের দ্বারা কমিশন গঠনের স্বার্থে রাষ্ট্রপতি যদি একজন নতুন কমিশনার নিয়োগে বিএনপিসহ সব বিরোধী মহলের পক্ষ থেকে একজনের নাম প্রস্তাবের সুযোগ দেন এবং অন্যজন আওয়ামী লীগসহ তাদের সহযোগী সব রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নাম প্রস্তাবের সুযোগ দেন, তাহলে সংকট নিরসন করা মোটেই দুঃসাধ্য হবে না; বরং সেটাই হবে দেশবাসীর কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য।
তবে সার্বিকভাবে দেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার স্বার্থে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের কোন বিকল্প নেই। নির্বাচন কমিশনকে সর্বোচ্চ শক্তিশালী সংস্থা রূপে গঠন করতেই হবে। সেজন্য কমিশনের জনবল, প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনী, প্রশাসনিক ক্যাডার, প্রয়োজনীয় বাজেট দিতে হবে এবং নির্বাচন পরিচালনায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী গ্রহণের প্রচলিত নিয়মের পরিবর্তন করতে হবে কমিশনের নিজস্ব প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনী দ্বারা। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন হবে স্বশাসিত একটি প্রতিষ্ঠান, যা পরিপূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে তার দায়িত্ব পালন করবে। তারা কেবল দায়বদ্ধ থাকবে দেশের রাষ্ট্রপতির কাছে।
এ কথা আজ আর অস্বীকার করা যাবে না, গত পাঁচ বছর দেশে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে তা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হয়েছে দেশবাসীর কাছে। এমনকি আন্তর্জাতিক মহলও সেসব নির্বাচন নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য করেনি। শতভাগ সাফল্যের দাবি কেউ করে না, কিন্তু যতখানি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হলে নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় সাবেক তৃতীয় বিশ্বের এসব ক্ষেত্রে পশ্চাৎপদ দেশে তেমন ভালো নির্বাচন বর্তমান কমিশন জাতিকে উপহার দিতে সক্ষম হয়েছে। সেজন্য বিএনপি বা অন্য কিছু দল ধন্যবাদ দিতে না পারলেও দেশবাসী তাদের তা দেবে। যদি দেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিক চর্চা অব্যাহত রাখা যায় তাহলে অদূর ভবিষ্যতেই দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা শত ভাগ সাফল্যের দাবি করার পর্যায়ে পেঁৗছতে সক্ষম হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সে অবস্থায় দেশে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করে যারা ফায়দা হাসিল করতে চায় তারাও প্রমাদ গুনতে বাধ্য হবে।

Partner site : online news / celebrities /  celebrity image
website design by Web School.
Read more