Sun, 22/05/2011 - 5:07pm | by Shykh.Seraj
কৃষক ও ভোক্তা উভয় পর্যায়েই কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নেই। কৃষক
পাচ্ছেন কম দাম, ভোক্তা কিনছেন বেশি দামে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন
এলাকায় কৃষিপণ্যের পাইকারি বাজার, প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র ও সংরক্ষণাগার
গড়ে তোলার দিকে জোর দিতে হবে । নতুন বছরের বাজেটে কৃষির যে দিকগুলোতে
বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন তা তৃণমূল পর্যায়ে পাঁচটি স্থানে প্রাক্-বজেট
আলোচনায় উঠে এসেছে। এতে রয়েছে কৃষকের দাবি, প্রস্তাব ও প্রত্যাশা।
বিএডিসির বীজ উৎপাদনসাধ্য বাড়তে হবে : বীজ নিয়ে কৃষকরা সবচেয়ে বেশি সংকটে আছেন। বিএডিসির বীজ সরবরাহ সাধ্য অনেক কম হওয়ায় কৃষকরা বাইরের বীজের ওর নির্ভর করছেন। প্রতিনিয়ত ভেজাল ও নিম্নমানের বীজের কারণে প্রতারিত হচ্ছেন তারা। এ প্রতারণা ও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার জন্য বিএডিসির বীজ উৎপাদনের পরিধি এবং সাধ্য অনেক বাড়াতে হবে। কৃষকদের মধ্য থেকে চুক্তিবদ্ধ বীজ উৎপাদকের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। এক্ষেত্রে বিএডিসির মাধ্যমে কৃষকদের বিভিন্ন সহায়তা ও ভর্তুকি দেওয়া যেতে পারে। এর সঙ্গে বেসরকারি কোম্পানির বীজ বিক্রি ও সরবরাহে কঠোর মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
কৃষি ভর্তুকি উপকরণে : এবার দেশের ৫টি এলাকার ১৫ হাজার কৃষকের সিংহ ভাগই সরকারের কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড পেয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তারা সবাই ভর্তুকির অর্থ নগদে প্রদানের পরিবর্তে কৃষি উপকরণের ভেতর তা প্রদানের জন্য সুপারিশ করেছেন।
দুর্যোগ সহনশীল ধানের জাত : দেশের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত লবণসহিষ্ণু জাতের চেয়ে উপকূলীয় এলাকায় স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা পুরনো লবণসহিষ্ণু জাতগুলোর কার্যকারিতা অনেক। কৃষকদের সংগৃহীত ধানের জাতগুলো নিয়ে অংশগ্রহণমূলক জাত উন্নয়ন গবেষণা করতে হবে। এক্ষেত্রে জাতীয় বাজেটে বিশেষ নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন।
তিন ফসলি কৃষিজমি : বিভিন্ন এলাকায় তিন ফসলি কৃষিজমিতে অকৃষি স্থাপনা, কলকারখানা, আবাসন তৈরি তৎপরতা বন্ধ হয়নি। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও নরসিংদী থেকে শুরু করে দেশের অনেক জেলায় কৃষিজমি ব্যাপক হারে কমতে শুরু করেছে। গ্রাম পর্যায়ে কৃষকদের জন্য স্বল্প ব্যয়সম্পন্ন আবাসন ব্যবস্থা করা গেলে ফসলি জমিতে বাড়িঘর করার প্রবণতা কমবে। এক্ষেত্রে সরকারের স্থানীয় সরকার ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কৃষিজমি রক্ষা করে স্বল্প ব্যয়সম্পন্ন আবাসন কাঠামো গড়ে তোলা যেতে পারে।
শিল্প বর্জ্যের দূষণ : পরিবেশ দূষণ ও কলকারখানার বর্জ্য থেকে কৃষিজমি, জলাশয়, বনভূমিসহ সামগ্রিক পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে। বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদী পরিণত হয়েছে মেগাসিটি ঢাকার ভাগাড়ে। নদীর পানিতে মাছসহ সব জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ নিঃশেষ হয়ে গেছে। মারা যাচ্ছে গবাদিপশু। কৃষিসহ সামগ্রিক কৃষি উৎপাদন সেক্টর, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষার জন্য শিল্প-কলকারখানায় অবশ্যই বর্জ্য শোধন প্লান্ট স্থাপন করে বর্জ্য শোধন অপরিহার্য করতে হবে।
কৃষক পর্যায়ে পণ্যের ন্যায্যমূল্য : কৃষক ও ভোক্তা উভয় পর্যায়েই কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নেই। কৃষক পাচ্ছেন কম দাম, ভোক্তা কিনছেন বেশি দামে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষিপণ্যের পাইকারি বাজার, প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র ও সংরক্ষণাগার গড়ে তোলার দিকে জোর দিতে হবে। এক্ষেত্রে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ ও ভেরিভেটিভ মার্কেটিং ব্যবস্থা চালু করার জন্য সরকার বিশেষ উদ্যোগ নিতে পারে। ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষক নিয়ন্ত্রিত ও মধ্যস্বত্বভোগীমুক্ত চাষিবাজার স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে।
জৈবকৃষি : দেশে বছরে ৫০ হাজার টন কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে যার আনুমানিক দাম ৫০ হাজার কোটি টাকা। সরকার নিষিদ্ধ ৫০টিরও অধিক কীটনাশক এখন পর্যন্ত বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ভেজাল কীটনাশকেও বাজার ছেয়ে গেছে। কীটনাশক আমদানি, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এবং তার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
শস্যবীমা ও শস্যগুদাম ঋণ : ফসল ইন্স্যুরেন্স বাবদ এ বছরও বাজেটে বরাদ্দ উল্লেখ ছিল। কিন্তু সে বরাদ্দের সুফল কৃষক পাননি। জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণেই কৃষি এখন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এ প্রেক্ষাপটে কৃষকরা নিশ্চিত শস্যবীমা দাবি করেছেন। বাংলাদেশ সরকার এবং সুইজারল্যান্ডের আর্থিক সহযোগিতায় কৃষি বিপণন অধিদফতরের মাধ্যমে পরিচালিত কর্মসূচি শস্যগুদাম ঋণ প্রকল্পের কার্যক্রম দেশব্যাপী সম্প্রসারিত করার দাবিও জানিয়েছেন তারা।
হিমাগার : সবজি ও ফল ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার জন্য অন্তত প্রতি জেলায় একটি করে হিমাগার স্থাপন করতে হবে।
খোলাবাজারে সার বিক্রি : সরকারি মূল্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই খোলাবাজারে সার বিক্রির ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন দেশের অধিকাংশ এলাকার কৃষক। তারা বলছেন, বর্তমান অবস্থায় অনেক দূরের পথ পাড়ি দিয়ে তাদের সার সংগ্রহ করতে বেশি বেগ পেতে হয়। এতে অর্থ ও সময়ের দিক থেকে তারা ক্ষতিগ্রস্ত।
হাওর অঞ্চল : হাওর উন্নয়ন বোর্ডকে ঢেলে সাজাতে হবে এবং তাদের কার্যকর ও সক্রিয় করতে হবে। হাওর অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়ন ও নদী ড্রেজিংয়ের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। হাওর অঞ্চলে যে মৌসুমে জলমগ্ন থাকে সে মৌসুমে কৃষকদের উপার্জনমুখী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
পোলট্রি : ভারত থেকে ডিম ও একদিনে বাচ্চা আমদানি সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। অভ্যন্তরীণভাবে একদিনের বাচ্চা উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। একদিনের বাচ্চার দাম কমাতে হবে। পোলট্রি খাতের জন্য কৃষি খাতের মতোই উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রদান করতে হবে। পোলট্রি খাতের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা চালু করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ খাত বিবেচনা করে পোলট্রি খাতে ঋণ দেওয়া হয় না। এ অবস্থাকে খামারিরা বৈষম্য হিসেবে মনে করেন। যেসব উপকরণ সহায়তায় পোলট্রি ফিড প্রস্তুত করা হয় তার সব উপাদানের দামই কমেছে। কিন্তু পোলট্রি ফিডের দাম কমেনি। পোলট্রি ফিডের দাম কমানোর জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বার্ড ফ্লুতে পুঁজি হারানো খামারিদের জন্য এক হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ অনুমোদন করতে হবে। এ খাতে এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হলেই সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি প্রতি পরিবারের একজনের কর্মসংস্থান দেওয়ার অর্ধেকই পূরণ করা সম্ভব। পোলট্রির প্রচলিত রোগগুলোর ভ্যাকসিন দেশেই উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে দেশের কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশেষজ্ঞদের গবেষণাকে গুরুত্ব দিতে হবে। কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পোলট্রি বিষয়ক গবেষণার প্রসার ঘটাতে হবে।
মৎস্য : মৎস্য খাতকে কৃষির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। ভূমি উন্নয়ন কর, বিদ্যুৎ বিল, ঋণ, ভর্তুকি প্রদানসহ সবক্ষেত্রে কৃষি খাতের অনুরূপ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হবে। ঋণের ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংকে সুদের হারের সামঞ্জস্য ও সমতা নিশ্চিত করতে হবে। কলকারখানাসহ বিভিন্ন উৎস থেকে নদী ও অন্যান্য জলাশয়ের পানিদূষণ রোধের উদ্যোগ নিতে হবে। মাছের স্থানীয় বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং চাষিদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। একইভাবে মাছ রফতানির ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ ও সুযোগ-সুবিধা প্রদানের উদ্যোগ নিতে হবে। মাছের খাদ্য ও পোনার মান পরীক্ষা এবং নিয়মিত সরকারি তদারকি নিশ্চিত করতে হবে। চাষের ক্ষেত্রে মাটি ও পানির গুণগত মান পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। বিলুপ্ত প্রজাতির দেশি মাছের জাত রক্ষার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের যুগোপযোগী জরিপ প্রয়োজন। সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে প্রচলিত নীতিমালা পরিবর্তন ও সংস্কার করতে হবে।
প্রাণিসম্পদ ও দুগ্ধ খামার : প্রাণিসম্পদ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জন্য, বিশেষ করে পশু পালনকারী ও দুগ্ধ খামারিদের জন্য কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ডের অনুরূপ পরিচয়পত্র প্রদান করতে হবে। দেশের দুগ্ধ খামার সমৃদ্ধ এলাকাগুলোতে দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র ও চিলিং প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে। দেশীয় ক্ষুদ্র খামারি পর্যায়ে দুধের দাম নিশ্চিত করা এবং বীমা চালু করতে হবে। সব পশুখাদ্যের দাম কমাতে হবে, বিশেষ করে বিভিন্ন রাইস মিল থেকে ধানের কুঁড়া ভারতে রফতানি বন্ধ করতে হবে। সরকারি কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রমের পরিধি আরও সম্প্রসারণ করতে হবে। পশুরোগ শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে দেশে একাধিক উন্নতমানের ল্যাবরেটরি স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে। বিনামূল্যে প্রাণিসম্পদের বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করতে হবে। দুগ্ধ খামারিদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ভারত থেকে দুগ্ধজাত কাঁচাপণ্য যেমন_ ছানা, মাখন আমদানি ও অবৈধ পথে আসা বন্ধ করতে হবে।
বিএডিসির বীজ উৎপাদনসাধ্য বাড়তে হবে : বীজ নিয়ে কৃষকরা সবচেয়ে বেশি সংকটে আছেন। বিএডিসির বীজ সরবরাহ সাধ্য অনেক কম হওয়ায় কৃষকরা বাইরের বীজের ওর নির্ভর করছেন। প্রতিনিয়ত ভেজাল ও নিম্নমানের বীজের কারণে প্রতারিত হচ্ছেন তারা। এ প্রতারণা ও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার জন্য বিএডিসির বীজ উৎপাদনের পরিধি এবং সাধ্য অনেক বাড়াতে হবে। কৃষকদের মধ্য থেকে চুক্তিবদ্ধ বীজ উৎপাদকের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। এক্ষেত্রে বিএডিসির মাধ্যমে কৃষকদের বিভিন্ন সহায়তা ও ভর্তুকি দেওয়া যেতে পারে। এর সঙ্গে বেসরকারি কোম্পানির বীজ বিক্রি ও সরবরাহে কঠোর মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
কৃষি ভর্তুকি উপকরণে : এবার দেশের ৫টি এলাকার ১৫ হাজার কৃষকের সিংহ ভাগই সরকারের কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড পেয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তারা সবাই ভর্তুকির অর্থ নগদে প্রদানের পরিবর্তে কৃষি উপকরণের ভেতর তা প্রদানের জন্য সুপারিশ করেছেন।
দুর্যোগ সহনশীল ধানের জাত : দেশের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত লবণসহিষ্ণু জাতের চেয়ে উপকূলীয় এলাকায় স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা পুরনো লবণসহিষ্ণু জাতগুলোর কার্যকারিতা অনেক। কৃষকদের সংগৃহীত ধানের জাতগুলো নিয়ে অংশগ্রহণমূলক জাত উন্নয়ন গবেষণা করতে হবে। এক্ষেত্রে জাতীয় বাজেটে বিশেষ নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন।
তিন ফসলি কৃষিজমি : বিভিন্ন এলাকায় তিন ফসলি কৃষিজমিতে অকৃষি স্থাপনা, কলকারখানা, আবাসন তৈরি তৎপরতা বন্ধ হয়নি। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও নরসিংদী থেকে শুরু করে দেশের অনেক জেলায় কৃষিজমি ব্যাপক হারে কমতে শুরু করেছে। গ্রাম পর্যায়ে কৃষকদের জন্য স্বল্প ব্যয়সম্পন্ন আবাসন ব্যবস্থা করা গেলে ফসলি জমিতে বাড়িঘর করার প্রবণতা কমবে। এক্ষেত্রে সরকারের স্থানীয় সরকার ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কৃষিজমি রক্ষা করে স্বল্প ব্যয়সম্পন্ন আবাসন কাঠামো গড়ে তোলা যেতে পারে।
শিল্প বর্জ্যের দূষণ : পরিবেশ দূষণ ও কলকারখানার বর্জ্য থেকে কৃষিজমি, জলাশয়, বনভূমিসহ সামগ্রিক পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে। বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদী পরিণত হয়েছে মেগাসিটি ঢাকার ভাগাড়ে। নদীর পানিতে মাছসহ সব জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ নিঃশেষ হয়ে গেছে। মারা যাচ্ছে গবাদিপশু। কৃষিসহ সামগ্রিক কৃষি উৎপাদন সেক্টর, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষার জন্য শিল্প-কলকারখানায় অবশ্যই বর্জ্য শোধন প্লান্ট স্থাপন করে বর্জ্য শোধন অপরিহার্য করতে হবে।
কৃষক পর্যায়ে পণ্যের ন্যায্যমূল্য : কৃষক ও ভোক্তা উভয় পর্যায়েই কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নেই। কৃষক পাচ্ছেন কম দাম, ভোক্তা কিনছেন বেশি দামে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষিপণ্যের পাইকারি বাজার, প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র ও সংরক্ষণাগার গড়ে তোলার দিকে জোর দিতে হবে। এক্ষেত্রে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ ও ভেরিভেটিভ মার্কেটিং ব্যবস্থা চালু করার জন্য সরকার বিশেষ উদ্যোগ নিতে পারে। ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষক নিয়ন্ত্রিত ও মধ্যস্বত্বভোগীমুক্ত চাষিবাজার স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে।
জৈবকৃষি : দেশে বছরে ৫০ হাজার টন কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে যার আনুমানিক দাম ৫০ হাজার কোটি টাকা। সরকার নিষিদ্ধ ৫০টিরও অধিক কীটনাশক এখন পর্যন্ত বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ভেজাল কীটনাশকেও বাজার ছেয়ে গেছে। কীটনাশক আমদানি, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এবং তার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
শস্যবীমা ও শস্যগুদাম ঋণ : ফসল ইন্স্যুরেন্স বাবদ এ বছরও বাজেটে বরাদ্দ উল্লেখ ছিল। কিন্তু সে বরাদ্দের সুফল কৃষক পাননি। জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণেই কৃষি এখন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এ প্রেক্ষাপটে কৃষকরা নিশ্চিত শস্যবীমা দাবি করেছেন। বাংলাদেশ সরকার এবং সুইজারল্যান্ডের আর্থিক সহযোগিতায় কৃষি বিপণন অধিদফতরের মাধ্যমে পরিচালিত কর্মসূচি শস্যগুদাম ঋণ প্রকল্পের কার্যক্রম দেশব্যাপী সম্প্রসারিত করার দাবিও জানিয়েছেন তারা।
হিমাগার : সবজি ও ফল ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার জন্য অন্তত প্রতি জেলায় একটি করে হিমাগার স্থাপন করতে হবে।
খোলাবাজারে সার বিক্রি : সরকারি মূল্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই খোলাবাজারে সার বিক্রির ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন দেশের অধিকাংশ এলাকার কৃষক। তারা বলছেন, বর্তমান অবস্থায় অনেক দূরের পথ পাড়ি দিয়ে তাদের সার সংগ্রহ করতে বেশি বেগ পেতে হয়। এতে অর্থ ও সময়ের দিক থেকে তারা ক্ষতিগ্রস্ত।
হাওর অঞ্চল : হাওর উন্নয়ন বোর্ডকে ঢেলে সাজাতে হবে এবং তাদের কার্যকর ও সক্রিয় করতে হবে। হাওর অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়ন ও নদী ড্রেজিংয়ের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। হাওর অঞ্চলে যে মৌসুমে জলমগ্ন থাকে সে মৌসুমে কৃষকদের উপার্জনমুখী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
পোলট্রি : ভারত থেকে ডিম ও একদিনে বাচ্চা আমদানি সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। অভ্যন্তরীণভাবে একদিনের বাচ্চা উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। একদিনের বাচ্চার দাম কমাতে হবে। পোলট্রি খাতের জন্য কৃষি খাতের মতোই উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রদান করতে হবে। পোলট্রি খাতের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা চালু করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ খাত বিবেচনা করে পোলট্রি খাতে ঋণ দেওয়া হয় না। এ অবস্থাকে খামারিরা বৈষম্য হিসেবে মনে করেন। যেসব উপকরণ সহায়তায় পোলট্রি ফিড প্রস্তুত করা হয় তার সব উপাদানের দামই কমেছে। কিন্তু পোলট্রি ফিডের দাম কমেনি। পোলট্রি ফিডের দাম কমানোর জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বার্ড ফ্লুতে পুঁজি হারানো খামারিদের জন্য এক হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ অনুমোদন করতে হবে। এ খাতে এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হলেই সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি প্রতি পরিবারের একজনের কর্মসংস্থান দেওয়ার অর্ধেকই পূরণ করা সম্ভব। পোলট্রির প্রচলিত রোগগুলোর ভ্যাকসিন দেশেই উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে দেশের কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশেষজ্ঞদের গবেষণাকে গুরুত্ব দিতে হবে। কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পোলট্রি বিষয়ক গবেষণার প্রসার ঘটাতে হবে।
মৎস্য : মৎস্য খাতকে কৃষির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। ভূমি উন্নয়ন কর, বিদ্যুৎ বিল, ঋণ, ভর্তুকি প্রদানসহ সবক্ষেত্রে কৃষি খাতের অনুরূপ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হবে। ঋণের ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংকে সুদের হারের সামঞ্জস্য ও সমতা নিশ্চিত করতে হবে। কলকারখানাসহ বিভিন্ন উৎস থেকে নদী ও অন্যান্য জলাশয়ের পানিদূষণ রোধের উদ্যোগ নিতে হবে। মাছের স্থানীয় বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং চাষিদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। একইভাবে মাছ রফতানির ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ ও সুযোগ-সুবিধা প্রদানের উদ্যোগ নিতে হবে। মাছের খাদ্য ও পোনার মান পরীক্ষা এবং নিয়মিত সরকারি তদারকি নিশ্চিত করতে হবে। চাষের ক্ষেত্রে মাটি ও পানির গুণগত মান পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। বিলুপ্ত প্রজাতির দেশি মাছের জাত রক্ষার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের যুগোপযোগী জরিপ প্রয়োজন। সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে প্রচলিত নীতিমালা পরিবর্তন ও সংস্কার করতে হবে।
প্রাণিসম্পদ ও দুগ্ধ খামার : প্রাণিসম্পদ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জন্য, বিশেষ করে পশু পালনকারী ও দুগ্ধ খামারিদের জন্য কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ডের অনুরূপ পরিচয়পত্র প্রদান করতে হবে। দেশের দুগ্ধ খামার সমৃদ্ধ এলাকাগুলোতে দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র ও চিলিং প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে। দেশীয় ক্ষুদ্র খামারি পর্যায়ে দুধের দাম নিশ্চিত করা এবং বীমা চালু করতে হবে। সব পশুখাদ্যের দাম কমাতে হবে, বিশেষ করে বিভিন্ন রাইস মিল থেকে ধানের কুঁড়া ভারতে রফতানি বন্ধ করতে হবে। সরকারি কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রমের পরিধি আরও সম্প্রসারণ করতে হবে। পশুরোগ শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে দেশে একাধিক উন্নতমানের ল্যাবরেটরি স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে। বিনামূল্যে প্রাণিসম্পদের বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করতে হবে। দুগ্ধ খামারিদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ভারত থেকে দুগ্ধজাত কাঁচাপণ্য যেমন_ ছানা, মাখন আমদানি ও অবৈধ পথে আসা বন্ধ করতে হবে।