যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ইহুদী ফ্যাক্টর এবং নৈতিকতা

,

টোকিও ট্রায়াল নিয়ে ১৯৭২ সালে এক জাপানি গবেষক কাতসুইচি হোন্ডা তার লেখা The Journey to China'তে চীনা ভুক্তভোগীদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে যা জাপানের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক "আশাহি শিম্বুন"এ প্রকাশিত হয়। তার এই লেখার প্রতিবাদে ইহুদীবাদী দাবীদার শিচিহেই ইয়াসাতো নামের এক লেখকের আবির্ভাব ঘটে। মৃতের সংখ্যা অতিরঞ্জিত, চীনের দালাল ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে "রিপ্লাই টু কাতসুইচি হোন্ডা" নামে লেখা প্রকাশ করে। একটি শ্রেণীর আশীর্বাদে তার লেখার আরও কয়েকটি পর্ব অব্যাহত থাকে।
ইতিহাসের পাতায় কাতসুইচি হোন্ডার নামই আলোকিত হয়ে আছে। এটি ছাড়াও জাপানের পাঠ্যপুস্তকে চীন সংশ্লিষ্ট তথ্য নিয়েও দুদেশের বৈরিতা ছিল। ২০০৫ সালে জাপানের যুদ্ধের বিভীষিকার জন্য প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা প্রার্থনা করার পর তাদের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের দ্বার উন্মুক্ত হয়।
মুক্তিযুদ্ধ ও তার ইতিহাস বিকৃতির অনেক চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কোন চেষ্টাই সফল হয় নি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ স-মহিমায় উজ্জ্বল আর এর কৃতিত্ব অবশ্যই বাংলার মুক্তিযোদ্ধাদের। বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণই তো ছিল মুক্তিকামী জনতা। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে বাংলাদেশে যখন যুদ্ধাপরাধের বিচার চলছে। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম, সেক্টর কমান্ডারগণসহ বাংলার মানুষ এই যুদ্ধাপরাধের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে চাচ্ছে, ঠিক তখনই আবির্ভাব হল ডেভিড বার্গমেন নামক এক ইহুদীর যে ইসরাইলের প্রতিনিধি বলে কথিত আছে।
বেশ কিছুদিন আগে কোথায় যেন পড়েছিলাম জামায়াতে ইসলামীতে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ তাদের এজেন্ট তৈরি করছে। শুনে বিশ্বাস বা অবিশ্বাস কোনটিই করতে পারিনি। জামাতীরাতো বহুবার ফিলিস্তিনে জেহাদে যাবার ঘোষণা দিয়েছিল। একজন মজা করে বললো, ১৯৮৩ সালে ফিলিস্তিনের শহীদদের গায়েবী জানাযা পড়তে গেলে মুসল্লিরা গোলাম আযমকে জুতাপেটা করে, সেই ক্ষোভ থেকে বোধহয় জামাত ইসরাইল ভক্ত হয়েছে।
রাবণের মাঝেও কবি ভালবাসা খুঁজে পেয়েছেন। কিছু ঘটনার সূত্র মিলিয়ে বিষয়বস্তু যা দাঁড়ায় তা দু:খজনক একই সাথে জামাত যে কতটা নীতি-নৈতিকতাহীন তা ভেবে মনে হয় তাদের সৃষ্ট সেমি-ফ্রাঙ্কেন্সটাইন বাংলা ভাইতো তাদের চেয়ে ভাল ছিল। সে অন্তত প্রাণ ভিক্ষা পাবার জন্য কোন অনুনয়/ছলনা করেনি। তার বিশ্বাস ভ্রান্ত-দর্শনে প্রোগ্রামড ছিল কিন্তু সে যে তার বিশ্বাসে অটল ছিল তা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ নেই। একজন মানবতাবাদী আফসোস করতে পারেন মিসগাইডেড এই ভেবে। কিন্তু জামাতকে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখলেও ঘৃণা না করার ন্যূনতম কোন বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যাবে না।
৭৩ এর ট্রাইব্যুনাল এবং ড: কামাল হোসেন
১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরেই গণহত্যার বিচারের কথা বলেন যা দৈনিক বাংলায় ১১ই জানুয়ারি প্রকাশিত হয়।
২৬ এপ্রিল, ১৯৭২ দিল্লীর স্টেটসম্যান পত্রিকার এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার না হলে ইতিহাস ক্ষমা করবেনা। ভবিষ্যৎ বংশধর ক্ষমা করবেনা।
বঙ্গবন্ধুর বিশেষ স্নেহের পাত্র ছিলেন ড: কামাল হোসেন। আইনগত বিষয়ে তাকে ভূমিকা রাখার সুযোগ দিয়েছেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি দালাল আইন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন থেকে শুরু করে তিন দফা সংশোধনী, গেজেট প্রকাশ, এ লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধনী ও ৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধসমূহ ট্রাইব্যুনাল চূড়ান্ত হওয়া পর্যন্ত মনোরঞ্জন ধর, ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আহমেদ সহ ড: কামাল হোসেন এ আইন প্রণয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।
১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল দিল্লিতে বাংলাদেশ-পাকিস্তান-ভারত ত্রিদেশীয় চুক্তির ১৫ ধারায় ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দির মুক্তির জন্য পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির আবেদনের প্রেক্ষিতে কামাল হোসেন প্রেস ব্রিফিং'এ বলেন, "যেহেতু পাকিস্তান সরকার ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দির বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সে কারণে তাদের মুক্তি দেয়া হয়।"
উল্লেখ্য ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট পর্যন্ত এ ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্য অব্যাহত ছিল।
এই ড: কামাল হোসেন বঙ্গবন্ধুর ক্যারিশমায় সাংসদ নির্বাচিত হওয়া ছাড়া আজীবন জন-বিচ্ছিন্নতার কারণে নির্বাচনে জামানত হারিয়েছেন যা রাজনীতিতে টিকে থাকার অন্যতম শর্ত। তারপরও আওয়ামী লীগের সাথে তার আলোচিত কোন দ্বন্দ্ব ছিল না। শুধুমাত্র ড: ইউনুসের আইনজীবী হবার কারণে তার নৈতিক স্খলন এ পর্যায়ে যাবে যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে এটি অত্যন্ত দু:খজনক।
ডেভিড বার্গমেন
ড: ইউনুসের স্বপ্নের গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় প্রথম যে দুজন সহায়তার হাত প্রশস্ত করেছেন তার প্রস্তাব উত্থাপক শাহ এএমএস কিবরিয়া এবং চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয় শেখ হাসিনার নির্দেশে। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সাইফুর রহমানও তাকে সহায়তা করেনি। সরকারী ঋণ না পেলে গ্রামীণ ব্যাংক মহীরূহ হয়ে দাঁড়াত কিনা তা প্রশ্নসাপেক্ষ। ডেভিড বার্গমেন ইসরাইলের একজন লবিস্ট হিসেবে কাজ করা ছাড়াও তার আরও পরিচয় সে ড: ইউনুসের প্রচারণার অন্যতম ব্যক্তি। গতবছর একটি অখ্যাত অনলাইন পত্রিকায় শেখ হাসিনা ও ড: ইউনুসকে নিয়ে আর্টিক্যাল লিখে বিভিন্ন সংস্থায় পাঠিয়েছিল। ডেভিড বার্গমেনের আরেকটি পরিচয় সে ড: কামাল হোসেনের মেয়ে সারা হোসেনের স্বামী। অনেকে তাকে আমাদের জামাই হিসাবে পত্রিকায় বিশেষায়িত করে।
এই ডেভিড বার্গমেন যুদ্ধাপরাধ প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু করে প্রায় ছয় মাসের বেশী সময় থেকে। একটি ব্লগে আদালতের কার্যবিবরণী বিবরণ প্রকাশ করা শুরু করে। সম্প্রতি এডিটেড বিবরণী প্রচার শুরু করেছে।
ডেভিডদের নৈতিকতার মাপকাঠি কি?
সারা হোসেন এবং বিনা ডি কস্তা একটি আইন বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশ করে যা অনলাইনে কেনা যায়। একই ধরণের টাইটেল ব্যবহার করে সে বইয়ের লেখা এবং ডেভিডের নামে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত (যা আরও কয়েকটি পর্বে লেখা হবে), বর্তমানে তাদের অবস্থান এসব কিছু যদি মিলিয়ে দেখতে যান গুলিয়ে যাবে সব। কখনও ডাবল স্ট্যান্ডার্ড কখনও কপি। আমার প্রশ্ন হল সারা হোসেনরা ডেভিডের লেখাকে ভিত্তি হিসেবে ধরেছে নাকি সে তাদের বইকে? এটি কি তাদের মত নামীদামী ব্যক্তিদের মানায়? সারা হোসেনের সাথে আরও একজন লেখক জড়িত, বিনা ডি কস্তা। ডেভিডের লেখাটির উদ্দেশ্য যুদ্ধাপরাধের প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করা।
জামায়াতের ঘৃণ্য চরিত্র আবার সম্মুখে
জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারা যে মওদুদীর মত নিজ বৈষয়িক স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করে তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ ইসরাইলের কৃপা-দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা। এতে এগিয়ে এসেছেন ডেভিড বার্গমেন। শোনা যায় ইসরাইল অনেকদিন থেকে বাংলাদেশের সাতে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চাচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে এবং জামায়াতে ইসলামীর সূত্র তাদের নিশ্চয়তা দিয়েছে বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় এলে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
ইসলামের জন্য যে জামায়াত জীবন দিতে প্রস্তুত, বাংলা হবে আফগান, জেহাদি মনোভাব দেখে মনে হতো ইসরাইলকে ধূলিসাৎ করে দিবে। তারা আজ ইসরাইল-মুখী। বুশকে পুড়িয়ে মারবে সেই বিএনপি-জামাত এখন রিপাবলিকান লবিস্ট নিয়োগ দিচ্ছে!
এ রাজনীতির কোন জোকারের স্থান কোথায় হবে তা নির্ধারণে আশাকরি জনগণ এবং এ প্রজন্ম ভুল করবে না।

Partner site : online news / celebrities /  celebrity image
website design by Web School.

0 comments to “যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ইহুদী ফ্যাক্টর এবং নৈতিকতা”

Post a Comment